‘মিয়ানমার একেক বার একেক কথা বলছে, সেটিই চিন্তার বিষয়’

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি ফোকাস বাংলা)রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে চিন্তার কিছু নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘চিন্তার বিষয় হচ্ছে, মিয়ানমার কী করবে। তারা  একেক বার একেক কথা বলছে। নানা অজুহাত খাড়া করার চেষ্টা করছে, সেটিই চিন্তার বিষয়। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে খুব একটা অসুবিধা হবে না। রোহিঙ্গারা ফিরে গিয়ে যেন খাবার পায়, রিলিফ পায় আমরা সে চেষ্টাও করে যাচ্ছি।’

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে রোম সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

তিনি বলেন, মিয়ানমার নানা রকম টালবাহানা করছে, তাতে সন্দেহ নেই। এটা তাদের একটা চরিত্র, তারা এটি করে যাচ্ছে। তবে তারা যেহেতু রাজি হয়েছে, ঠিক আছে, আগে ৮ হাজারই নিক। নিলে আমরা দেখব যে তারা তাদের সঙ্গে কী ব্যবহার করে। একবার যদি নেওয়া শুরু করে, তারপর দেখেন স্রোতের মতো অনেকেই চলে যাবে। আপনাদের আর চিন্তা করতে হবে না। সবাই নিজ বাড়িঘরে ফিরতে চায়।’

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক কোটির বেশি মানুষ ভারত চলে গিয়েছিল। যেদিনই সারেন্ডার করলো পাকিস্তান আর্মি, কাউকে আর সেধে আনতে হয়নি। এদেরও (রোহিঙ্গা) ঠিক সেটিই হবে। আমার মনে হয়, এটি নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই।’

মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফেরত নেওয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার দিকটিও দেখতে হবে। এতবড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে। এখন আমরা তাদের ফেরত পাঠাবো। আমরা তো তাদের ঠেলে পাঠাতে পারি না। ঠেলে ফেলে দিলে এরা কী অবস্থায় পড়বে, তা আপনারাও বোঝেন। তারা তো মানুষ। তাদের আমরা তোপের মুখে ফেলে দেবো কীভাবে?’

মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াতে না চাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরা (মিয়ানমার) আমাদের প্রতিবেশী। আমরা চাইনি যে, প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হোক। যদিও সমস্যা সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার, সমাধানের দায়িত্বও কিন্তু তাদের। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, একটা সমঝোতায় এসেছি। যৌথ কমিটিও করা হয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবে। চীন, ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, লাওসের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। পাঁচটা জায়গাতেই গোলমাল রয়েছে। আমরা এই পাঁচ দেশের সঙ্গেও আলোচনা করেছি।’  

গত নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করার পর এখন পর্যন্ত মাত্র ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা তৈরির প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাঁচ হাজার পরিবারের তালিকা তৈরি হয়েছে। তালিকা কিন্তু সবারই আছে। আমি একটা কাজ করেছিলাম, এজন্য আমাকে আপনাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। তারা যখনই দেশে ঢোকা শুরু করেছে, সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে টাকা পাঠিয়ে, ল্যাপটপ কিনে, লোক নিয়োগ দিয়ে তাদের তালিকা করেছি। সবকিছু করে তাদের আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। তারা যে রোহিঙ্গা, সেটি চিহ্নিত করতে সেই কার্ডের ফিতা কিন্তু হলুদ রঙের। প্রতিদিন কতজন এলো, কার্ড দেওয়া হলো–সব হিসেব রাখা হয়েছে। কত শিশুর জন্ম হচ্ছে, তারও হিসেব রাখা হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা ১৯৭৬ সালে শুরু। তখন থেকে বহুবার এসেছে, ফেরত গেছে। ১৯৯১ সালে ৩-৪ লাখ থেকেই গিয়েছিল। তখন রেজিস্টার করা ছিল মাত্র ২৬ হাজার। বাকিরা কুতুপালং বা এসব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের কোনও হিসেব, ঠিকানাই নাই। তখনকার সরকার হিসেব রাখেনি। আমরা কিন্তু তা করিনি। তারা যে ঢুকছে সেই ছবি, প্রত্যেকের আলাদা ছবি; সেই সঙ্গে ছবি দিয়ে তাদের পরিচয়পত্র। এখন কিন্তু মিয়ানমার কোনোদিন অস্বীকার করতে পারবে না যে, এরা তাদের নাগরিক নয়।’

প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের রাখা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এখন কুতুপালং ও বালুখালীতে আছে। নতুন একটি দ্বীপ আমরা উন্নত করছি। সেখানে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছি, প্রজেক্ট করে দিয়েছি। ঘরবাড়ির নকশাও করা হয়ে গেছে। সাইক্লোন শেল্টার করছি। সাগরের দিকে বাঁধ করে দিচ্ছি, যেন জলোচ্ছ্বাস বা জোয়ারের পানি না ঢুকে। আমরা চাচ্ছি রোহিঙ্গাদের আস্তে আস্তে সেখানে নিয়ে যাবো। কুতুপালং, বালুখালীর গাছপালা সব শেষ। যেহেতু গাছ কাটা হয়ে গেছে সামনে বর্ষা, যেকোনও সময় পাহাড়ে ধস নামতে পারে। অ্যাকসিডেন্ট হতে পারে। কাজেই আমরা চাচ্ছি, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের একটা অস্থায়ী ক্যাম্প করে রাখতে।’

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার ফেরত নেওয়ার আগে তারা যাতে মানুষের মতো বসবাস করতে পারে সেজন্য ভাসানচরে আমরা ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি। প্রথমে আমরা এক লাখ লোকের ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি। ভাসানচরে যথেষ্ট জায়গা আছে। অন্তত ১০ লাখ লোক রাখার মতো জায়গা আছে। তারা চলে যাওয়ার পর সেটি দেশের মানুষের জন্য ব্যবহার করা যাবে। চাইলে সেটি বেড়ানোর জায়গা হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।’