প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ না হলে সরকারের সব অর্জন ধূলিসাৎ হবে: মেনন



রাশেদ খান মেনন (ছবি: সংগৃহীত)পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহামারি রোধ করতে না পারলে সব অর্জন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। শিক্ষাখাতের প্রতারণা নিশ্চিতভাবে আমাদের জাতিকে ধ্বংস করবে।’ সোমবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। শিক্ষকদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু কী কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে, তা নির্ধারণ করা হচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে কোনও দায়িত্ব নিচ্ছে না। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও দায়িত্ব নিচ্ছে না।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, ‘‘সাউথ আফ্রিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে লেখা আছে ‘যদি একটি জাতিকে ধ্বংস করতে চাও, তাহলে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় নাও।’ আজকে আমাদের এখানে যে প্রতারণা ঘটছে, তা নিশ্চিতভাবে আমাদের জাতিকে ধ্বংস করবে।’’
মাদ্রাসা শিক্ষা প্রসঙ্গে মেনন বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকেও স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠানে কী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে? তা কি আমরা খতিয়ে দেখছি? মাদ্রাসা শিক্ষায় ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নামাজের নিয়ম জানে না। সুরা ফাতেহা পড়তে পারে না। এটাই হচ্ছে শিক্ষার চিত্র। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস হবে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম হয় মাদকাসক্ত হবে না হয় জঙ্গিবাদে পরিণত হবে।’
ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কথা তুলে মেনন বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে এখন নৈরাজ্য চূড়ান্ত। খেলাপি ঋণ বেড়েই চলছে। সরকারকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য মূলধন জোগান দিতে হচ্ছে। রিজার্ভ চুরির টাকা ফেরত পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা আছে কিনা, জানি না। প্রতিনিয়ত বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। এই পাচারকৃত অর্থ দিয়ে দেশের কয়েকটি বাজেট হতে পারে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা প্রসঙ্গে মেনন বলেন, ‘দুর্নীতির জন্য খালেদা জিয়ার দণ্ড হয়েছে। অনেকেই খালেদা জিয়ার সাজার পেছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি খোঁজেন। এটি বিএনপি-জামায়াত জোটের দুর্নীতির ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। আমাদের ১৪ দলের প্রতিশ্রুতি ছিল, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন দূর করা। খালেদা জিয়ার এই দণ্ড ১৪ দলের সেই রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির সূচনা মাত্র। কিন্তু আজকে আমরা দেখছি সমস্ত দেশের মধ্যে দুর্নীতির বিশাল প্রচলন হয়েছে। পাকিস্তান পানামা পেপারস নিয়ে তদন্ত করতে পারলে আমরা পারছি না। অনেক বড় বড় দুর্নীতি আমাদের হাতের বাইরে থেকে যাচ্ছে। অর্থ পাচার ঋণ জালিয়াতির তদন্ত আশা করি করা হবে। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
সরকারকে সতর্ক করে এই মন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর নির্বাচনের বছর। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, গ্যাস-পানি সংকট। এসব দৈনন্দিন বিষয় মানুষকে আলোড়িত করে। আতঙ্কিত করে খুন-ধর্ষণ-গুমের ঘটনাবলী। মানুষ বিরক্ত হয় দলবাজি-দখলবাজি-অন্তর্দলীয় কোন্দলে। এসব ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ চালাচ্ছি। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার এখনো ঘটছে। সহিংস ঘটনা, আধিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন জনমনে অস্বস্তি তৈরি করছে।’ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সরকার সকল দলের অংশ নেওয়ার মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমুলক নির্বাচন চায়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের পুরনো গান গেয়েই যাচ্ছে। আসলে নির্বাচন নয়, তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। প্রতিদিন সেকথা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।’
মেনন বলেন, ‘আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দিতে পেরেছি। কিন্তু নিঃশেষ করতে পারিনি। তারা প্রতি আক্রমণ করতে সদা প্রস্তুত। এই সরকার তাদের কলজে হাত দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের রায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখন খালেদা-তারেকের দুর্নীতি ও হত্যা মামলার বিচার হচ্ছে। কাজেই তারা প্রতিআক্রমণ করবেই। এই প্রতিআক্রমণ মোকাবিলায় অসাম্প্রদায়িক শক্তির ঐক্যের বিকল্প নেই। এই লড়াইয়ে ১৪ দলের ঐক্যকে কার্যকর করতে হবে।