‌‌'এটাই যে তার শেষ বক্তব্য ছিল এখন অনুভব করছি'

বন্ধু ডা. নোমান খালেদ চৌধুরীর সঙ্গে বি কে থাপাকাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত হয়েছেন নেপালি চিকিৎসক বি কে থাপা। তিনি দেশটির ভারতপুর চিতওয়ান এলাকার বিপি কয়রাল মেমোরিয়াল ক্যানসার হসপিটালের অনকো সার্জারি ইউনিটের প্রধান ছিলেন। সোমবার (১২ মার্চ) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘সে গতকাল পুরো বাংলায় একটি বক্তব্য রেখেছে। আমরা শুনে অবাক হয়ে গেছি। আজ  তার মৃত্যুর খবর শোনার পর অনুভব করতে পারছি সে আসলে তার জীবনের সর্বশেষ বক্তৃতাটি গতকাল ঢাকা ক্লাবে আমাদের সামনে দিয়েছিল।’

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, সত্যি সে নেই। আপনার সঙ্গে যখন কথা বলছি এখন রাত প্রায় সাড়ে ১১টা বাজে। গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের সর্বশেষ দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। গতকাল রাতে আমরা ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ হলে ছিলাম। একসঙ্গে ছিলাম দু’জন। তখন অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। তারপর আমরা ১১টার দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে যাই। সেটাই তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা।’

অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, ‘১৯৯৮ সালে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) আইপিজিএমআর ছিল তখন আমরা দু’জন নিউরো সার্জারি ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র ছিলাম। সে এখান থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর নেপালে চলে যায়। প্রায়ই বাংলাদেশে আসতো। বাংলাদেশকে খুব অনুভব করতো। সে বাংলাদেশের খুবই ভালো একজন অনুরাগী ছিল। আমাদের খুব ভালো বন্ধু ছিল। মানুষ হিসেবে অসম্ভব ভালো ছিল।’

নিহত নেপালি চিকিৎসক বি কে থাপা

এবার নাইট ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে হোটেল সোনারগাঁওয়ে নিউরো সার্জারি বিষয়ক সেমিনারে অংশ নিতে এসেছিলেন এই নেপালি চিকিৎসক।

অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, ‘গতকাল সে একটি অসাধারণ বক্তৃতা দেয়। পুরো বক্তব্য বাংলায় দেয়। সেখানে বলেছিল, আমি কখনও ভাবতে পারিনি যে আমার শিক্ষকদের এভাবে কৃতজ্ঞতা জানাতে পারবো। কখনও ভাবতে পারিনি আমার বন্ধুদের এভাবে ধন্যবাদ জানাতে পারবো। কখনও ভাবতে পারিনি বাংলাদেশ নামক দেশটিকে এভাবে ধন্যবাদ জানাতে পারবো। যে দেশটির কাছে আমি ভালোভাবে শিখে আজ এখানে নিজে এতো ভাল অবস্থায় এসে পৌঁছেছি। এখানে বাংলায় বক্তব্য দেবো বলে বাংলাটা ভালো করে শিখে এসেছি। তার বক্তৃতা শুনে আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই।’

ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী আক্ষেপ করে বলেন, ‘তখন বুঝিনি এটি তার জীবনের শেষ বক্তব্য। এখন তার মৃত্যুর পর ওই বক্তৃতা আমার মাথায় ঘুরছে। বার বার মনে হচ্ছে। ওই বক্তৃতায় তার জীবনের সব কথা আমাদের কাছে বলে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘সে অসম্ভব ভালো একজন মানুষ ছিল। খুবই ভালো বন্ধু ছিল। তার মতো ভালো মানুষ হয় না। হাইটেক নিউরো সার্জারি নিয়ে সবাই আলাপ করে। সেমিনারে দেওয়া বক্তৃতায় সে লোটেক নিউরো সার্জারি নিয়ে বক্তব্য রেখেছে। বলেছে, আমার নেপাল গরিব দেশ। সেখানকার মানুষকে লোটেক নিউরো সার্জারি দিয়েই চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।’

ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে, সে নেই। আই কান্ট বিলিভ, মাই ফ্রেন্ড ইজ নো মোর উইদ আস। গতকাল রাত ১১টার দিকে আমরা একসঙ্গে ছিলাম। আজ সে নেই! এটা বিশ্বাস করতে পারছি না।