জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতেন, সেই স্বপ্ন যেন বাস্তবায়িত হয়- এই দৃঢ় প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী সরকারের কর্মসূচি পালিত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের স্ট্যাটাস থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এ অর্জন উদযাপনে ২০ মার্চ থেকে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু হলেও মূল কর্মসূচি পালিত হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ)।
এসব কর্মসূচি পালনকালে জানানো হয়, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটলেও ২০২৭ সাল পর্যন্ত স্বল্পোন্নত (এলডিসিভুক্ত) দেশের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবার পরও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে জিএসপি প্লাস নামে বাণিজ্য সুবিধা পাওয়া যাবে।
আরও জানানো হয়, ২০২৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। বিশ্ব বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার যোগ্যতা অর্জন করবে। তখন বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের এই অর্জনের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা, উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আনন্দ র্যালি ও নানা রঙ-বেরঙয়ের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে দেশব্যাপী শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মসূচিরতে রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের মানুষও অংশগ্রহণ করেছে। সপ্তাহব্যাপী আয়োজনের তৃতীয় দিন (বৃহস্পতিবার) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়। শুভেচ্ছা পর্ব শেষে দেশের উন্নয়নচিত্র নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এসময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে জাতিসংঘ ও ইউএনডিপির প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের নেতা, ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি মিশনের প্রতিনিধিসহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে- এসব আয়োজনে রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিক, খেলোয়াড়, এনজিও, প্রতিবন্ধীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এছাড়াও এ উপলক্ষে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ সেবা দেওয়ার জন্য ‘সেবা সপ্তাহ’ চলছে, ২০ মার্চ থেকে চলমান এ কর্মসূচি ২৬ মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে যাত্রা শুরু করি। এরপর বাংলাদেশকে একটি ধাপ এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। এই অগ্রযাত্রার সূচনা করেছিলেন জাতির পিতা। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে গড়ে তোলার কাজ সফলভাবে করে যাচ্ছিলেন তিনি। মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন, এর মধ্যেই বাংলাদেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে গেছেন। আজ আমরা সেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে নিজের বাবাকে স্মরণ করে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। মঞ্চে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে তিনি বলেন, ‘আজ নিশ্চয় তার (বঙ্গবন্ধু) আত্মা শান্তি পাবে।’
‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্ণিল ব্যানার, ফেস্টুন ও ব্যান্ড পার্টিসহ র্যালি নিয়ে বেরিয়েছেন। রাজধানীর পূর্বনির্ধারিত ৯টি স্থানে তারাও মিলিত হয়েছিলেন আনন্দ র্যালি নিয়ে। ওই পয়েন্টগুলো থেকেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গিয়ে যোগ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। সন্ধ্যা ৭টায় ওই অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ উপলক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষ থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে। এসময় ডিএনসিসি’র প্যানেল মেয়র ওসমান গণি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব, দূরদর্শিতা, মেধা ও প্রজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের এই সাফল্য এসেছে। তিনি ক্ষমতায় থাকলে ভবিষ্যতে বিশ্বের দরবারে আরও মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।’
সফলতা উদযাপনে ২০ থেকে ২৫ মার্চ ‘সেবা সপ্তাহ’ পালন করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এ উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটি কম সময়ের মধ্যে সেবা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। কোনও নাগরিক যদি এই সপ্তাহের মধ্যে ভবনের নকশা অনুমোদনের আবেদন করেন তাহলে ২০ দিনের মধ্যেই তা পেয়ে যাবেন। সাধারণত ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য ৪৫ দিন সময় লাগে।
স্বল্পোন্নত দেশের স্ট্যাটাস থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ উপলক্ষে ২০ থেকে ২৫ মার্চ ‘জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ’ পালন করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ২০ মার্চ সকাল ১১টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এই সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। উৎসব উদযাপনের জন্য বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি, ব্লাড ও সুগার টেস্টসহ বিভিন্ন ধরনের বিশেষ পরীক্ষা করা হচ্ছে বিনামূল্যে। এ উপলক্ষে স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা সদরের বিশেষায়িত হাসপাতাল ও উপজেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে ফ্রি সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে রোগী ভর্তি করতেও কোনও অর্থ দিতে হবে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) শোভাযাত্রার পাশাপাশি এই সংস্থার অঞ্চল-৫ এর সর্বত্র পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে দেখা যায়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্তত আধঘণ্টা আগে থেকেই রাস্তায় নেমে আসেন র্যালিতে যোগ দেওয়ার জন্য। রাজধানীর শিশু একাডেমির সামনে গণযোগাযোগ অধিদফতর ও মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, মৎস্য ভবনের সামনে সরকারি শিশু পরিবারে কমকর্তারা, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য অধিদফতর, বাংলা একাডেমি, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বিদ্যুৎ বিভাগের বৈদ্যুতিক উপদেষ্টা ও প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের দফতরসহ আরও বিভিন্ন সরকারি দফতর, অধিদফতর, বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে র্যালি করে হাজির হয়েছিলেন স্টেডিয়ামে। এ ছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি ও মৎস্য ভবন সংলগ্ন এলাকা, শিশু একাডেমি ও দোয়েল চত্বর সংলগ্ন এলাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন এলাকায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেশিয়াম মাঠ ও সংলগ্ন এলাকা, নগর ভবন (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন), বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বর, রমনা পার্কের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ ও শিল্পভবন চত্বও থেকেও মানুষ র্যালি নিয়ে স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়েছেন।
আনন্দ উদযাপনের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা বিশেষ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে হয়েছিল। বাহিনীর পোশাক পরিহিত পুলিশ সদস্য ছাড়াও সাদা পোশাকে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাজধানীর পথে পথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে আয়োজিত কর্মসূচিতে বক্তারা আগামীর প্রত্যয় ব্যক্ত করে জানান, এবার উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম উঠবে বাংলাদশের। বিশ্বে এখন বাংলাদেশের নতুন পরিচয়- মধ্য আয়ের দেশ। এ অর্জন আত্মমর্যাদার, অহংকারের, গৌরবের। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেনো থেমে না যায়। এই অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে হবে। পিছিয়ে থাকবো না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। মাথা উঁচু করে চলতে হবে।