নাগরিকত্ব পেলেন সেই ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হেলেন

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সনদ নিচ্ছেন লুসি হেলেন, ছবি: ফোকাস বাংলাব্রিটিশ নাগরিক লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট অবশেষে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেলেন। এই দেশের জন্য তার ভালোবাসা এবং মানবতার সেবায় নিবেদিত থাকায় সরকার ৮৭ বছর বয়সী লুসিকে নাগরিকত্ব দিয়েছে। তিনি ৫৭ বছর ধরে বাংলাদেশে বসবাস করছেন।

শনিবার (৩১ মার্চ) বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এক অনুষ্ঠানে লুসি হেলেনের কাছে নাগরিকত্বের সনদ হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং শেখ রেহানা উভয়ই লুসি হেলেনের সঙ্গে কথা বলেন। লুসি বর্তমানে বরিশাল নগরীর অক্সফোর্ড মিশনে থাকেন। তিনি নাগরিকত্ব পেয়ে অত্যন্ত খুশি।

লুসি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন, তিনি বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। তবে তার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি।

ব্রিটেনের সেন্ট হেলেন্স শহরে ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর লুসির জন্ম। মাত্র ১৯ বছর বয়সে মানবতার সেবায় অনুপ্রাণিত হন এবং নার্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। শৈশব থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশের প্রতি তার আকর্ষণ ছিল। মানবতার সেবার অঙ্গীকার নিয়ে তিনি ১৯৬০ সালে বাংলাদেশে আসেন। ওই বছরই লুসি বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে যোগদান করেন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পড়াতে শুরু করেন। এরপরে তিনি আর নিজের দেশে ফেরেননি। এই দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার আকর্ষণে বাংলাদেশেই অবস্থান করছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সনদ নিচ্ছেন লুসি হেলেন, ছবি: ফোকাস বাংলাপরে তিনি যশোর, খুলনা, নওগাঁ, ঢাকা ও গোপালগঞ্জে ৫৭ বছর ধরে কাজ করেছেন। ২০০৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে ফিরে যান।

অবসর জীবনে লুসি এখন দুস্থ শিশুদের ইংরেজি শেখাচ্ছেন এবং মানসিক বিকাশে সহায়তা করছেন। পাশাপাশি লুসি দুস্থ শিশুদের জন্য সম্পদশালী লোকদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করছেন।

মৃত্যুর পর লুসি বাংলাদেশের মাটিতেই সমাহিত হতে চেয়েছেন। বাংলাদেশের নাগরিকত্বের জন্য গত ২২ জানুয়ারি বরিশালের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন জানান এবং তার আবেদনটি মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশের জন্য তার অবদানের কথা বিবেচনা করে সরকার ২২ মার্চ তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করে।

এর ফলে লুসি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সকল সুবিধা পাবেন এবং ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবেও তার সবরকম সুবিধা বজায় থাকবে।

যুদ্ধের পর তিনি ১৯৭৩ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কাছে একটি চিঠি ও কিছু উপহার পাঠান। পরে শেখ রেহানা চিঠি ও উপহারের জন্য লুসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠান, যা এখনও তার কাছে রয়েছে। খবর বাসস।