বিনা বেতনে ২০ বছর সরকারি চাকরি

পশু কৃত্রিম প্রজনন টেকনেশিয়ান‘কথা ছিল পাঁচ বছর স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে হবে। চুক্তিও হয়েছিল। কিন্তু বিনা বেতনে ২০ বছর সরকারি কাজ করেও স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে না তা ভাবিনি। যোগ্যতা না থাকলে কর্মসংস্থান চাইতাম না। স্বেচ্ছায় ২০ বছর শ্রম দিয়ে তারপর কর্মসংস্থানের দাবি করছি। কিন্তু কেউ দেখে না কীভাবে চলে আমাদের জীবন ও সংসার।’

কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর ডেমরা এলাকার  ‘পশু কৃত্রিম প্রজনন টেকনেশিয়ান’ মো. আজাদ হোসেন। বৃহস্পতিবার (১০ মে) বিকালে আজাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুধু আমি একা নই, বিনা বেতনে ২০ বছর চাকরি করছেন আমার মতো আরও ৯০ জন। যাদের অনেকেই এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। আর নতুন যোগ দেওয়া থেকে শুরু করে বিনা বেতনে ২০ বছর চাকরি করার সংখ্যা মোট দুই হাজার ৮০০ জন।’

আজাদ হোসেন জানান, ‘শুধু পাঁচ বছর বেতন-ভাতা চাইতে পারবো না এমন শর্তে পশু কৃত্রিম প্রজনন টেকনেশিয়ান হিসেবে একটি প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ করে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। ১৯৯৮ সালে নিয়োগের পর থেকে কোনও বেতন-ভাতা ছাড়াই কাজ করেছি ১৭ বছর। ২০১৬ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আর এ নিয়ে ভাবার বা দেখার কেউ নেই।’পশু কৃত্রিম প্রজনন

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সারা দেশে ৯০ লাখ প্রজনন সক্ষম গাভী রয়েছে। দুই হাজার ৮০০ জন পশু কৃত্রিম প্রজনন টেকনেশিয়ান বিনা বেতনে এসব গাভীর কৃত্রিম প্রজনন কাজে নিয়োজিত। শুধু তাই নয়, সারা দেশের হাঁস- মুরগিসহ গবদিপশুর তথ্য এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন এই টেকিনিশিয়ানরা। ১৯৯৮ সালের পাঁচ বছরের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে প্রকল্পের আওতায় চুক্তিতে নিয়োগ করে অধিদফতর। গত ২০ বছরে প্রকল্প তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়া ছাড়া ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন হয়নি পশু কৃত্রিম প্রজনন টেকনেশিয়ানদের। পশু কৃত্রিম প্রজনন টেকনিশিয়ানদের আন্দোলন

দেশের আমিষ জোগান দিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে মাংস ও দুধ। যা দিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সফলতার বিজয়গাঁথা প্রচার করা হয় প্রতিবছর। আর এ অর্জনের নেপথ্যে যাদের অবদান প্রায় ৯০ শতাংশ, তারাই আজও অবহেলিত বলে দাবি করেন টেকনিশিয়ানরা। তাই অধিকার আদায়ে বাংলাদেশ এ আই টেকনিশিয়ান কল্যাণ সমিতি সম্প্রতি সমাবেশ করে রাজধানীতে। টেনিশিয়ানদের অমানবিক অবস্থা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছে সমিতি।

বাংলাদেশ এ আই টেকনিশিয়ান কল্যাণ সমিতির সভাপতি আজাদ হোসেন ও মহাসচিব মো. মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বেশি কিছু চাই না। দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে ন্যূনতম মজুরি দিয়ে স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা চাই। চুক্তি অনুযায়ী টার্গেট দেওয়া আছে প্রতি বছর ৬০০ গাভীর প্রজনন করাতে হবে। তাই একই ইউনিয়নে একাধিক এ আই টেকনিশিয়ান নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। কৃত্রিম প্রজনন সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণী কমিটিতে সমিতির প্রতিনিধি রাখতে হবে এবং উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে হবে গো-সম্পদ উন্নয়নে।’পশু কৃত্রিম প্রজনন টেকনিশিয়ানদের আন্দোলন

টেকিনিশিয়ানরা জানান, প্রজনন সমক্ষম গাভী প্রজনন কাজ করে যে সামান্য আয় করেন তারা, তার একটি বড় অংশ সরকারের ঘরেই জমা দেন। একটি গাভী প্রজনন করে মালিকের কাছ থেকে টেকনিশিয়ানরা পান ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ওই টাকার মধ্যে ৩০ টাকা জমা দিতে হয় অধিদফতরে। একজন টেকনিশিয়ান গাভী প্রতি আয় করেন ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বছরে তার আয় ১৮ থেকে ২৪ হাজার। আর প্রতি মাসে সরকারের দেওয়া ৫০০ টাকা ভাতা।