মঙ্গলবার (১৫ মে) খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন (কেসিসি) অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এই নির্বাচনে ক্ষমতসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন। ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৮৬টির ঘোষিত ফল অনুযায়ী, নৌকা প্রতীক নিয়ে খালেক পেয়েছেন একলাখ ৭৪ হাজার ৮৫১ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের প্রার্থী মঞ্জু পেয়েছেন একলাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট।
নির্বাচনে ২৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি স্থগিত করা হয়েছে অনিয়মের অভিযোগের কারণে। এর বাইরে আরও কিছু কেন্দ্রে সিল মেরে বাক্স ভরার চেষ্টা এবং বিএনপি প্রার্থীর প্রচার ক্যাম্পে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
খুলনার নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা কিছু অনিয়ম দেখেছে। জাল ভোট দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে এই ঘটনাগুলোর মাধ্যমে বলার সুযোগ নেই যে, ফল পরিবর্তনের মতো কোনও ঘটনা ঘটেছে।’
ভালো নির্বাচনের মানদণ্ডে খুলনা সিটি নির্বাচনটি কুমিল্লা বা রংপুরের মতো হয়নি মন্তব্য করে আব্দুল আলীম বলেন, ‘এই নির্বাচনটি এই কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত অন্য দুটি সিটি নির্বাচনের তুলনায় মান নিম্নমুখী। বলা যেতে পারে, সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় বিচ্যুতি হয়েছে।’
ইডব্লিউজি তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ১১৯টি ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে মন্তব্য করে আব্দুল আলীম বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষক দল ৩২ শতাংশ কেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনা দেখতে পেয়েছে। এর মধ্যে অবৈধভাবে ব্যালট পেপারে সিল মারা, ভোট কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে সংগঠিত সামান্য সহিংসতা, ভোটকেন্দ্রে অননুমোদিত মানুষের উপস্থিতি এবং ভোটারকে ভোট প্রদানে বাধার মতো ঘটনা ঘটেছে।’
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণে নির্বাচনে অনিয়মের বেশ কিছু ঘটনা উঠে এসেছে। আমরা চাই, এসব অনিয়ম থেকে শিক্ষা নিয়ে কমিশন তাদের ত্রুটি সংশোধন করবে। ভবিষতে নির্বাচনে যাতে এ ধরনের ছোট বা বড় কোনও অনিয়মের ঘটনা না ঘটে, সেই ব্যবস্থা নেবে।’
ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স (ফেমা) এর প্রধান মুনিরা খান জানান, তারা ৮০টি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে। তার মধ্যে ৫/৬টিতে অনিয়ম পেয়েছে। এছাড়া, তাদের মোবাইল টিম কিছু জায়গায় অনিয়ম দেখেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণে নির্বাচনটি মোটামুটি ভালো হয়েছে।’
মনিরা খান ভালো-মন্দ বিচারে এই নির্বাচনকে অন্য নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করতে রাজি নন। তার মতে, নির্বাচনি এলাকার ভোটার সংখ্যা ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে এই পরিস্থিতির হেরফের হতে পারে। মুনিরা খান বলেন, ‘রংপুরের নির্বাচনকে আমরা যেভাবে ভালো বলেছিলাম। এই নির্বাচনে সেটা বলতে পারছি না।’