মিয়ানমারের মানবাধিকার কর্মীরা জেনারেলদের বিচার চান

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী

রোহিঙ্গাদের সমস্যা সম্পর্কে মতামত জানতে চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) অনুরোধে বাংলাদেশের সাড়া দেওয়া উচিত বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীসহ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গারা যে আন্তর্জাতিক অপরাধের মুখোমুখি হচ্ছে, তার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা এবং এর জন্য দায়ীদের আইসিসিতে বিচারের ব্যবস্থা করা উচিত।

মিয়ানমারের ভিন্নমতাবলম্বী কণ্ঠস্বর মং জারনি বাংলা ট্রিবিউনকে এক ই-মেইল বার্তায় বলেন, ‘বাংলাদেশের উচিত হবে আইসিসি’র অনুরোধে সাড়া দেওয়া।’

বাস্তবতার নিরিখে এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ, বিচার ও দায়বদ্ধতার ঐতিহাসিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।

আইসিসি’র প্রি-ট্রায়াল চেম্বার গত ৭ মে বাংলাদেশকে চিঠি পাঠিয়ে আগামী ১১ জুনের মধ্যে প্রকাশ্যে বা গোপনীয়ভাবে মতামত জানানোর জন্য অনুরোধ করে।

মং জারনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে গণহত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে এবং এর পুরনো ক্ষত এখনও আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা বা জনমত স্বীকৃতি দেয়নি।’

তিনি  বলেন, ‘বাংলাদেশের উচিত হবে রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে যে আন্তর্জাতিক অপরাধের মুখোমুখি হচ্ছে, তার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা এবং এরজন্য দায়ীদের আইসিসিতে বিচারের ব্যবস্থা করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের ভেতরে রোহিঙ্গাদের প্রতি গণহত্যা চালানো হচ্ছে, সেটি চিরতরে বন্ধ করাটা বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় স্বার্থের জন্য প্রয়োজন।’

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে মোহাম্মাদ শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য  বাংলাদেশের এটি একটি সুযোগ।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করছে। কিন্তু এখনও সেটি তেমন কার্যকর হয়নি।’

শহীদুল হক বলেন, ‘আইসিসি একটি ভিন্ন প্রক্রিয়া। এখানকার যেকোনও রায় রোহিঙ্গাদের দুঃখজনক অধ্যায় শেষ করতে স্থায়ী ভূমিকা রাখবে।’

তিনি মনে করেন, যদি বাংলাদেশ আইসিসির অনুরোধে সাড়া না দেয়, তবে এটি গোটাবিশ্বের কাছে একটি ভুল বার্তা পৌঁছে দেবে।

এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বুধবার  (২৩ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আইসিসির জিনিসটা (চিঠি) এসেছে।’

বাংলাদেশ কী জবাব দেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের জবাব আপাতত নেই। কারণ, হলো, আমরা দেখছি কী করা যায়।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কাছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তিনটি বিষয়ে মতামত চেয়েছে। প্রথমত: মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা কী, দ্বিতীয়ত: রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বিষয়ে আইসিসির বিচার করার অধিকার আছে কিনা এবং তৃতীয়ত: এ বিষয়ে অন্য যেকোনও প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান।

গত ৯ এপ্রিল আইসিসির প্রসিকিউটর ফাতু বেনসৌদা রোহিঙ্গাদের মামলা শুনানির অধিকার সংক্রান্ত একটি রুলের জন্য আইসিসিতে আবেদন দাখিল করেন। এর দুদিন পরে আইসিসি তিনজন বিচারকের সমন্বয়ে একটি প্রি-ট্রায়াল চেম্বার গঠন করে।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অত্যাচারের কারণে বিভিন্ন সময়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এদের গত ২৫ আগস্টের পরে ৩০ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী, ৩৬ হাজার অনাথ এবং ৭৮০০ শিশু, যাদের বাবা ও মা উভয়ই নিখোঁজ রয়েছেন, তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।