‘রোহিঙ্গা শিশুরা অস্ত্রের পরিবর্তে এখন প্রকৃতির ছবি আঁকছে’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া (ছবি- ফোকাস বাংলা) 

ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত ও বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলেছেন, কীভাবে দুস্থ মানবতার পাশে দাঁড়াতে হয় সে ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছ থেকে বিশ্বের শিক্ষা নেওয়া উচিত। আগে আমরা দেখেছি, রোহিঙ্গা শিশুরা অস্ত্রের ছবি এঁকেছিল, এবার তারা সূর্য, প্রকৃতির ছবি এঁকেছে। এর অর্থ রোহিঙ্গা শিশুরাও এখন স্বস্তিতে আছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে  বাংলাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছেন বলে।

বৃহস্পতিবার (২৪ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।

এসময়  প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

এ সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত উপ-প্রেস সচিব নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

নজরুল ইসলাম বলেন, বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে গত ৩ দিন উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন এবং সেখানে শিশুদের যে ভোগান্তি দেখেছেন সে সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিনিময় করেন।

প্রিয়াঙ্কা গত বছর রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে এখন আমি এক ধরনের স্বস্তি দেখেছি।’

প্রিয়াঙ্কা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘এর আগে ইউনিসেফের একটি প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে শিশুদের একটি ছবি আঁকতে বলেছিল। তখন তারা আকাশে চক্কর দেওয়া হেলিকপ্টার থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ছবি আঁকে। এবার তাদের আমি একই কাজ করতে বললে তারা সূর্য, প্রাণী ও প্রকৃতির ছবি আঁকে। এতে প্রমাণিত হয়, তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং এটি সম্ভব হয়েছে আপনার মাতৃত্বসুলভ আশ্রয় ও নিরাপত্তার কারণে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা এবং পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রোহিঙ্গা শিবিরে শিশুদের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রিয়াঙ্কা তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য ইউনিসেফের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শিশুদের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে প্রিয়াঙ্কা চার দিনের সফরে সোমবার বাংলাদেশে আসেন।

প্রিয়াঙ্কা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, জাতিগতভাবে বিপুলসংখ্যক শিশু কোনও শিক্ষা পাচ্ছে না। ফলে একটি প্রজন্ম হারিয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। তিনি বলেন, যথাযথ শিক্ষার ব্যবস্থা না হলে এই শিশুরা চরমপন্থার দিকে ঝুঁকতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একান্ত মানবিক কারণে তাঁর সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের জনগণও ১৯৭১ সালে একই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল।

তিনি ১৯৭৫ সালে তার পিতা-মাতার হত্যাকাণ্ডের পর প্রবাসে উদ্বাস্তু জীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেসব ঘটনা দুঃসময় দুস্থ মানবতার পাশে দাঁড়াতে তাকে শিক্ষা দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার রোহিঙ্গাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে সরকারের একার পক্ষে তাদের ভোগান্তি প্রশমন সম্ভব নয়। ইউনিসেফ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আরও সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে জানান, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরের নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে তারা ভালো পরিবেশে বসবাস করতে পারবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ সেখানে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগসহ সেখানে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার সুবিধাও থাকবে।

রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারের স্বাস্থ্যসেবা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার আশ্রয় শিবিরগুলোতে টিকা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা দিতে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশ ভূমিতে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ চুক্তি অনুযায়ী কাজ করছে না। বাসস।