ব্যাংক ডাকাতদের সুবিধা দিতেই এ বাজেট: ফিরোজ রশীদ

কাজী ফিরোজ রশীদ

নতুন অর্থবছরের (২০১৮-১৯) প্রস্তাবিত বাজেটে বিষ-মধু একসঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, ‘যারা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে ব্যাংক খালি করে দিয়েছেন, তাদের সুবিধা দিতেই এই বাজেট। ব্যাংক ডাকাতদের সুবিধা দিতেই অর্থমন্ত্রী এই বাজেট দিয়েছেন।’ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী যে দলের পক্ষ থেকে বাজেট দিয়েছেন, সেই দলের নীতি-আদর্শ, দর্শনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী বাজেট দিয়েছেন। এই বাজেটে বিষ আর মধু একসঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু জনগণ তো বিষ আর মধু একসঙ্গে খায় না।’ তিনি বলেন, ‘আপনি যদি এক বালতি দুধে এক ফোঁটা চনা দেন, তাহলে সমস্ত দুধ নষ্ট হয়ে যাবে। তেমনি প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের টাকায় ব্যাংক লুটেরাদের ভর্তুকি দেওয়ার মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী গোটা বাজেটের দর্শন নষ্ট করে দিয়েছেন। এই বাজেটে উনি ভেজাল মিশিয়েছেন।’

জাপার এই নেতা বলেন, ‘আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম। পাকিস্তান আমলে ২২ ধনীর পরিবর্তে এখন ১২২ ধনিক পরিবারের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের মোট সম্পদের ৮০ ভাগ ১২২ পরিবারের হাতে জিম্মি। বাকি ২০ ভাগের মালিক জনগণ। অর্থমন্ত্রী এই ধনিক শ্রেণির জন্যই বাজেট দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তো কোনও দিন পাকিস্তানের ২২ পরিবারের কাছে মাথানত করেননি। আপনি কেন লুটেরাদের কাছে মাথানত করবেন? ব্যাংকের লুটপাট বিষয়ে অর্থমন্ত্রী, মন্ত্রণালয় নীরব, বাংলাদেশ ব্যাংক নীরব, অর্থ বিভাগ নীরব। সবাই নীরব আর নিচের দিকে ব্যাংকগুলোতে চলে লুটপাট। ব্যাংকের ওপর মানুষের আর কোনও আস্থা নেই। কারণ, ব্যাংক এখন একটি পরিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। পারিবারিক ব্যাংক করে অবাধে লুটপাট চলছে।’

আওয়ামী লীগ টানা ১০ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় বড় বড় প্রকল্প নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেন ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারায় আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেলে অহঙ্কারও বেড়ে যায়। আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে এখন বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের অহঙ্কর।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনে এখন সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের বাইরে প্রশাসনে কাউকে পাওয়া যাবে না। এরা কোথায় ছিল? কে তাদের আওয়ামী লীগ বানাইলো। তাদের আওয়ামী লীগটা করলো কে? প্রশাসনে আওয়ামী লীগের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কে কত বড় আওয়ামী লীগ এটার জন্য গবেষণা চলছে। কার নানার বাড়ির কাছে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ছিল, কার চাচার সঙ্গে কার বিয়ে হয়েছিল, এসব দিয়ে আওয়ামী লীগ বের করার চেষ্টা হচ্ছে। এখন আওয়ামী লীগের বাইরে কাউকে পাওয়া যায় না। আসল আওয়ামী লীগ নকল আওয়ামী লীগ বেছে নেওয়া কঠিন হবে। তাদের দাপট এত বেশি বেড়ে গেছে, সাধারণ মানুষকে তারা তোয়াক্কা করে না। তারা ধরাকে সরা মনে করে। তারা তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করছে, এটা ভালো লক্ষণ না।’