‘বাদল ফরাজি দেশে ফিরবেন যেকোনও সময়’





বাদল ফরাজি (ছবি- সংগৃহীত)দিল্লির তিহার জেলে বন্দি বাংলাদেশের নাগরিক বাদল ফরাজিকে (২৮) খুব কম সময়ের মধ্যেই দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনারের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সোমবার (২৫ জুন) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এ তথ্য জানান ।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, বাদল ফরাজি বর্তমানে দিল্লির জেলে আছেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। যেকোনও সময় বাদল ফরাজি দেশে ফিরবেন বলেও জানান তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দেশে ফিরিয়ে আনার পর বাদল ফরাজিকে জেলে রেখেই বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যা করার তাই করা হবে।
গত ১০ বছর ধরে বন্দি আছেন বাংলাদেশের নাগরিক বাদল ফরাজি। বাগেরহাটের মংলা বন্দরের কাছে ১৭ নম্বর ফারুকি রোডের বাসিন্দা আবদুল খালেক ফরাজি ও সারাফালি বেগমের ছেলে এই বাদল ফরাজি। টিএ ফারুক স্কুলের অষ্টম শ্রেণি পাস বাদলের ইচ্ছা ছিল তাজমহল দেখবে। এর জেরে ২০০৮ সালের ১৩ জুলাই দুপুরে বেনাপোল অভিবাসন কার্যালয়ে সব প্রক্রিয়া শেষ করে ভারতের হরিদাসপুর সীমান্তে প্রবেশের পরই সেখানকার একটি খুনের অপরাধে বাদলকে আটক করে বিএসএফ। হিন্দি বা ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে না পারার কারণে বিএসএফের কর্মকর্তাদের বোঝাতেই পারেননি যে খুনের অভিযোগ যে বাদলকে খোঁজা হচ্ছে তিনি সেই ব্যক্তি নন।
২০০৮ সালে ৬ মে দিল্লির অমর কলোনিতে এক বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগে বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল পুলিশ। তাকে ধরতে সীমান্তেও সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু শুধু দুজনের নাম এক হওয়ায় বাংলাদেশি নাগরিক বাদল ফরাজিকে আটক করে বিএসএফ। পরে ওই খুনের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ নম্বর ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয় বাদলের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদলকে দোষী সাব্যস্ত করে দিল্লির সাকেট আদালত বাদলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। দিল্লি হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে। পরে বাদল ফরাজির স্থান হয় দিল্লির তিহার জেলে। বিনা দোষে এই সাজা মেনে না নিয়ে বাদল ফরাজি দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু শীর্ষ আদালতও বাদলের আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে জেলের কুঠুরিতে কাটাতে হচ্ছে বাদলকে (২৮)।
২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বাদলকে মুক্তির ব্যাপারে অনুরোধ জানায় দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন। চিঠিতে জানানো হয়, ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে বাদল ফরাজি ভারতে আসে। দিল্লিতে ওই বৃদ্ধাকে খুন করা হয় ২০০৮ সালের ৫ মে। খুনের পর ভারতে এলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে অপরাধের বোঝা বইয়ে বেড়াতে হচ্ছে বাদলকে। কিন্তু তারপরও মুক্তি পাননি বাদল।
বাংলাদেশের নাগরিক বাদলকে জেল থেকে মুক্ত করতে মাঠে নেমেছেন সেদেশের সমাজসেবী রাহুল কাপুর। তিনি বর্তমানে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইডি করছেন। স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনার সময়ে হাতে-কলমে শিক্ষা নিতে ২০১৬ সালে তিহার জেলে আসেন রাহুল। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন তিনি।
জেলের বন্দিদের পুনর্বাসন, তাদের কাউন্সেলিংয়ের কাজ করতে করতেই বাংলাদেশি নাগরিক বাদল ফারাজির সঙ্গে পরিচয় হয় রাহুল কাপুরের। এর পর রাহুল নিজে বাদলকে মুক্ত করতে নানা উদ্যোগ নেন। এছাড়াও বন্দি চুক্তির অধীনে বাদলকে বাংলাদেশের কোনও কারাগারে স্থানান্তরিত করার জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ হাইকমিশনের তরফেও আবেদন জানানো হয়েছে ভারত সরকারের কাছে।