৭৫ শতাংশ মাদ্রাসা শিক্ষকের কোনও প্রশিক্ষণ নেই

 



মাদ্রাসা২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা। এ কারণে দেশের শিক্ষার্থীদের (মূলত মাদ্রাসা শিক্ষার্থী) একটি বড় অংশই আধুনিক শিক্ষায় উপযুক্ত করে তোলা যাচ্ছে না। এর মূল কারণ প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক। দেশের ৭৫ শতাংশ মাদ্রাসা শিক্ষকের কোনও ধরনের প্রশিক্ষণ না থাকার এই চিত্রকে ‘এসডিজি ফোর’ অর্জনের পথে একটি বাধা হিসেবেই দেখছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।




তবে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ মাদ্রাসা  শিক্ষকদের দ্রুত প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে একটি প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। গাজীপুরে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (বিএমটিটিআই) ক্যাপাসিটি বাড়ানো হবে।  আঞ্চলিক অফিস স্থাপন করে প্রশিক্ষণ দিতে এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিছু কাজ বাকি রয়েছে সেগুলো শেষ হলে মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠাবো।’
প্রস্তাবিত প্রকল্পের পটভূমি সম্পর্কে জানা গেছে, এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে মানসম্মত শিক্ষক গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর মানসম্মত শিক্ষক তৈরি করতে হলে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। তবে ভয়াবহ চিত্র হলো— মাদ্রাসা শিক্ষকদের ৭৫ শতাংশের কোনও ধরনের প্রশিক্ষণ নেই। আর  যে ২৫ শতাংশের প্রশিক্ষণ রয়েছে তারা অনেকেই এক, তিন ও সাত দিনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, যা আধুনিক শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুপোযুক্ত।
অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, গাজীপুরে দেশের একমাত্র বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বিএমটিটিআই) রয়েছে। সেখানে এক বছরে মাত্র আড়াই হাজার শিক্ষকের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব। অন্যদিকে, দেশে সাধারণ শিক্ষার জন্য ৬৬টি প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ১৪টি সরকারি টিচার ট্রেনিং কলেজ এবং ১০৪টি বেসরকারি টিচার ট্রেনিং কলেজ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুগের পর যুগ বৈষম্যের শিকার মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।  
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, মাদ্রাসা শিক্ষকের অনুপাতে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট না থাকায় ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব নয়। অথচ এসডিজি-৪ অর্জনের জন্য ২০২৫ সালের মধ্যেই মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে সশ্লিষ্ট সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি। লাখ লাখ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আধুনিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া জরুরি।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর থেকে জানা গেছে, দেশে মোট এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) ও অনুদানপ্রাপ্ত মাদ্রাসার সংখ্রা ৯ হাজার ১৩৭টি। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত দাখিল ও কামিল মাদ্রাসার সংখ্যা ৭১৮টি। সরকারি অনুদান পাওয়া এবতেদায়ি মাদ্রাসা এক হাজার ৫১৯টি।  এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাখিল ও কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষক রয়েছেন এক লাখ ১৯ হাজার ৫৮৭ জন, এবতেদায়ি পর্যায়ের শিক্ষক চার হাজার ৫২৯ জন এবং আইসিটি শিক্ষক এক হাজার ২২৮ জন। এমপিওভুক্ত ও সরকারি অনুদান পাওয়া মোট শিক্ষক এক লাখ ২৫ হাজার ৪৪৪ জন। তবে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কিছু শিক্ষক নতুন করে এমপিওভুক্ত হচ্ছেন, আবার কিছু শিক্ষক নানা কারণে বাদ পড়ছেন।