বদলে যাচ্ছে মন্ত্রিপরিষদের কালো ব্রিফকেস

বাংলাদেশি পাটের তৈরি সোনালী রঙের নতুন ব্রিফকেসমন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের আলোচ্যসূচিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মন্ত্রীদের কাছে পাঠানোর কাজে ব্যবহৃত কালো ব্রিফকেস বদলে যাচ্ছে। চামড়া দিয়ে তৈরি এ ব্রিফকেসের বদলে মন্ত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে সোনালী আঁশ নামে খ্যাত বাংলাদেশি পাটের তৈরি সোনালী রঙের নতুন ব্রিফকেস। ইতোমধ্যেই ওই ব্রিফকেসের রঙ ও ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই ব্রিফকেসের স্যাম্পল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও দেখানো হয়েছে। জানা গেছে, ব্রিফকেসের রঙ ও ডিজাইন দুটোই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দ হয়েছে।

জানা গেছে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের নিজস্ব উদ্যোগে এ পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে ৭০টি ব্রিফকেস উপহার হিসেবে দেবেন তিনি। ইতিমধ্যেই বিজেএমসি ৭০টি ব্রিফকেস বানানোর প্রাথমিক কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে বাকি কাজ দ্রুত শেষ করা হবে বলে সূত্র জানায়।

জানা গেছে, প্রচলিত কালো ব্রিফকেসের সাইজেই প্রস্তুত করা হচ্ছে নতুন ব্রিফকেস। তবে নতুন ব্রিফকেসের উভয় পিঠ পাটের তৈরি মোটা কাপড় দিয়ে মোড়ানো রয়েছে। ব্রিফকেসের হাতল ও চার পাশের বর্ডার পাটের রংয়ের চামড়া দিয়ে মজবুত করা হয়েছে। প্রথা ভাঙা হলেও দেখতে চমৎকার ও আকর্ষণীয় নতুন আদলের এই ব্রিফকেসের প্রতি মন্ত্রীদের আগ্রহ রয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কালো চামড়ায় তৈরি ব্রিফকেসের তুলনায় পাটের আঁশে তৈরি ব্রিফকেসের দামও হবে তুলনামূলক অনেক কম। 
গত ৩ জুলাই রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া নতুন ডিজাইনের একটি ব্রিফকেস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখিয়ে মন্ত্রিপরিষদের সব মন্ত্রীকে এমন ব্রিফকেস একটি করে উপহার দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। একনেক সভায় উপস্থিত একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে এ সব তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মির্জা আজমের হাতে থাকা ব্রিফকেসটি মনোযোগ সহকারে দেখেন এবং তা পাশে উপবিষ্ট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে দেখানোর জন্য তার হাতে দেওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও তার স্বভাবসুলভ হাসিভরা মুখে ব্রিফকেসটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেন। সূত্র জানায়, ব্রিফকেসটি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর পছন্দ হয়েছে, এবং তারা দুজনই পাটের এই বহুমুখী ব্যবহার দেখে খুশি হয়েছেন।
পাটের তৈরি নতুন ব্রিফকেসপাট মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু পছন্দ করেছেন, সেহেতু আপাতত ৭০টি ব্রিফকেস তৈরি করার কাজ চলছে। ৭০টি ব্রিফকেস তৈরি শেষ হলেই প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। তারা আশা করছেন, এরপর থেকে নতুন ব্রিফকেসে করে মন্ত্রিসভার বৈঠকের এজেন্ডা সম্বলিত প্রয়োজনীয় ডক্যুমেন্টস মন্ত্রীদের কাছে পাঠানো হবে। ওই ব্রিফকেস হাতে নিয়েই মন্ত্রীরা মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অংশ নেবেন।
সূত্র জানায়, আপাতত প্রতিটি ব্রিফকেস তৈরিতে সম্ভাব্য খরচ হতে পারে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন যুগ্মসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, প্রতিবছরই মন্ত্রীদের জন্য কালো চামড়ার ব্রিফকেস কেনা হয় যা আসলেই খুবই ব্যয়বহুল। সেদিকটি বিবেচনায় নিলে পাটের তৈরি ব্রিফকেসটি যেমন সাশ্রয়ী, তেমনই কার্যকরী হবে।
বিজেএমসির একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের আগ্রহেই এই ব্রিফকেস তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে পাটের তৈরি পাপোশ ও কার্পেটের পাশাপাশি শাড়ি, চাদর, কম্বল, জুতা, পর্দা, কৃত্রিম ফুল, শো পিস, ক্যালেন্ডার, মানচিত্র, ব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে। এসব জিনিস বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হলো পাটের তৈরি নতুন পণ্য ব্রিফকেস।
পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সদ্যসমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাটজাত পণ্যের খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ১০২ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার, যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।

গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয় ছিল ৯৬ কোটি ২৪ লাখ ডলার। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় কিছুটা কম হয়েছে। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৫ কোটি ৫০ লাখ। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।