নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন হচ্ছে না

নির্বাচন ভবনগণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর উদ্যোগ থেকে সরে গেলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি ঢাকঢোল পিটিয়ে দেশের জাতীয় নির্বাচনের এই আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েও শেষ সময় এসে পিছু হটলো। ফলে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন হচ্ছে না। আর এই আইন সংশোধনী না হওয়ায় জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চালুর কোনও সম্ভাবনাই থাকছে না আর।


নির্বাচন একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে গত বছরের জুলাই মাসে যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিল, সেখানে আরপিও সংশোধনীর বিষয়টি উল্লেখ ছিল। পরে এই আরপিও সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। আরপিও সংস্কারের বিষয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অভিমত নেওয়া হয়। ওই কমিটি চার মাসের বেশি সময় ধরে আলোচনা পর্যালোচনা করে ইভিএম-এ ভোটগ্রহণসহ কমিটি ৩৫টি সংশোধনী প্রস্তাবের সুপারিশ তৈরি করে। তবে সেখানে বহুল আলোচিত সেনা মোতায়েনের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এরপর গত ১২ এপ্রিল কমিশন সভায় আরপিও সংশোধনীগুলো তোলা হলে কমিশন তা নাকচ করে তা পর্যালোচনার জন্য আবারও আইন সংস্কার কমিটিতে ফেরত পাঠায়।

ওই সময় নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আইন সংস্কারসংক্রান্ত কমিটি আরপিওর ৩৫টি সংশোধনী প্রস্তাব করেছে। এগুলো নির্বাচন কমিশনাররা পর্যালোচনা করেছেন। কমিশন মনে করে, এগুলো আরও পর্যালোচনা করা দরকার। কোনটা বাস্তবতার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য, কোনটা গ্রহণযোগ্য নয়, তা উপকমিটি আবার পর্যালোচনা করে প্রস্তাব করবে। প্রস্তাব পাওয়ার পর আবার কমিশন আলোচনা করবে। তবে, কতদিনের মধ্যে ওই উপকমিটি পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেবে তার সময় বেধে দেওয়া হয়নি বলে সচিব জানিয়েছিলেন।
জানা গেছে, আরপিও আইন সংস্কার কমিটিতে ফেরত যাওয়ার পর বিষয়টি আর এগোইনি। তবে, আরপিও সংশোধনীর জন্য কমিশনের পক্ষে থেকে এ সময় একজন পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়। জাতীয় নির্বাচনের আগে যে সময় রয়েছে, তাতে আরপিও সংশোধন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন কমিশনের কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, ১২ এপ্রিল কমিশন সভার আগের দিন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। পরে দলটির প্রতিনিধি দলের প্রধান এইচটি ইমাম বলেন, ‘আরপিও সংস্কার নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে জানতে কমিশনে গিয়েছিলাম। এছাড়া নির্বাচন আচরণবিধি নিয়ে বাস্তবে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ইসির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিষয়গুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘এ আচরণবিধি যেন এমন হয়ে না দাঁড়ায় যে, নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি করে। নির্বিঘ্নে নির্বাচন করার জন্য যেটুকু সংশোধন দরকার, সেটুকুই যেন করেন।’
আরপিও সংশোধনী না হওয়ার কারণ সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, কমিশন নির্বাচনি প্রস্তুতিতে এমনিতে রোডম্যাপ থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়া ভোটের জন্য কমিশনের হাতে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় থাকলেও সরকার চায় এ বছরের ডিসেম্বরে ভোট অনুষ্ঠিত হোক। যার অন্যদিকে আরপিও সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার পর আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং ও সংসদে উত্থাপনসহ আইনি প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করে তা পাস করা সময়সাপেক্ষ বিষয়। ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন নিয়ে অসম্ভব ব্যাপার বটে।
আরপিও সংশোধনীর বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ রবিবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধনের একটা উদ্যোগ আগে নেওয়া হয়েছিল। তবে সেটা আপাতত আর হচ্ছে না।’
এ নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘আরপিও সংশোধনের জন্য একজন কনসালটেন্টকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার কাছে ইসির প্রস্তাবিত আরপিও দেওয়া আছে। এ বিষয়ে কোনও অগ্রগতি আমার জানা নেই।