জিপি-পিপির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা চান ডিসিরা

ডিসি সম্মেলন ২০১৮জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে একটি সমন্বয় সেল গঠনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব করেছেন চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক (ডিসি)। এর বেশ কয়েকটি কারণও উল্লেখ করেছেন তিনি। এছাড়া, সরকারি কৌঁসুলিদের (জিপি-পিপি) নিয়োগ, বাতিল ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতাও চেয়েছেন তারা। একইসঙ্গে তারা সরকারি স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট মামলায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যক্তিগত হাজিরা থেকেও অব্যাহতি চেয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে এসব প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) থেকে সচিবালয়ে শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসক সম্মেলন। এ সম্মেলনকে সামনে রেখে সারাদেশের জেলা প্রশাসকরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ৩৪৭টি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। যেসব প্রস্তাবনা নিয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আলোচনা চলছে। বৃহস্পতিবার আলোচনা হবে আইন ও বিচার বিভাগসহ আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিষয়ে প্রস্তাবনা নিয়ে।

চুয়াডাঙ্গার ডিসি তার প্রস্তাবের পক্ষে বলেছেন, ‘হাইকোর্টে দেওয়ানি মামলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের সমন্বয় নেই। এছাড়া প্রায়ই হাইকোর্টে রিট মামলায় একতরফা শুনানি করে আদেশ দেওয়া হয়। জেলাপর্যায় থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা যথা সময়ে উপস্থাপন করা হয় না।’ এসব কারণেই তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সমন্বয়ের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে একটি সমন্বয় সেল গঠন করা প্রয়োজন বলে প্রস্তাব করেছেন।

সরকারি কৌঁসুলিদের নিয়োগ, বাতিল ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা জেলা প্রশাসকদের দেওয়ার প্রস্তাব করেন সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক। এর যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে সরকার পক্ষে দেওয়ানি মামলা পরিচালনায় সরকারি কৌঁসুলি অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ দেওয়ানি মামলা পরিচালনায় নিয়োজিত সরকারি কৌঁসুলিদের বিপক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা বর্তমানে জেলা প্রশাসকদের নেই।’

সিরাজগঞ্জের এই জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগে সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য জাবেদা কপি সলিসিটর বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু মামলার চলমান অবস্থা সম্পর্কে কোনও তথ্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে অবহিত করা হয় না। মামলার তথ্য জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হলে সরকারি স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।’ অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইব্যুনালের মামলার আপিলের সময় বাড়ানোরও প্রস্তাব করেছেন তিনি।

সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কনটেম্পট মামলায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিতে প্রস্তাব করেছেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক। এর পক্ষে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছেন, ‘সরকারি স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট মামলার বিষয়ে সরকারি স্বার্থে কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে কনটেম্পট মামলার উদ্ভব হয়। আর এ ক্ষেত্রে প্রায়ই সংশ্লিষ্ট কোর্ট থেকে ব্যক্তিগত হাজিরাসহ কৈফিয়ত তলব করা হয়। সরকারি স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হয়রানির শিকার হওয়া ছাড়াও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।’

মাদক মামলায় পৃথক আদালত গঠনের প্রস্তাব করেছেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের এফিডেভিট সংক্রান্ত দায়িত্ব আরও স্পষ্ট করার প্রস্তাব করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। বৈবাহিক সনদ প্রদান সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেন বরিশালের জেলা প্রশাসক। বাল্যবিয়ে রোধে কাজিদের পাশাপাশি পুরোহিতদের আইনি বাধ্যবাধকতার আওতায় আনার প্রস্তাব করেছেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার।

বৃদ্ধ মা-বাবার সেবাযত্ন ও তাদের অসহায়ত্ব থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ছেলে সন্তানদের দায়-দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতায় প্রয়োজন। সে জন্য ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন-২০১৩’কে মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯-এ তফসিলভুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাইবান্ধার সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম শফিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‌আমাদের নিয়োগ হয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। এখন সরকার যেভাবে করবে, সেভাবেই হবে। তবে বর্তমানে আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে। ভবিষ্যতেও তাদের অধীনে থাকাই শ্রেয় মনে করি।’

সরকারি কৌঁসূলিদের বিরুদ্ধে ডিসিদের শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা চাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জের  জিপি অ্যাডভোকেট জাহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘তারা প্রস্তাব দিতেই পারেন। সরকার যা ভালো মনে করবে, সেটা করবে। আমার বলার কিছু নেই। তবে আমি আমার দায়িত্ব পালনে কোনও অবহেলা বা গাফিলতি করি না।’