ঢাকাকে নয়াদিল্লি

এনআরসি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই

আসামের খসড়া নাগরিকপঞ্জীতে নিজেদের নাম দেখতে লাইনে দাঁড়িয়ে লোকজন (ছবি: রয়টার্স)

ভারতের আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস) তালিকা প্রকাশকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সঙ্গে যে তারা নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছে, অবশেষে তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করলো ভারত সরকার।
কিন্তু ওই নাগরিক তালিকা থেকে যারা বাদ পড়বেন তাদের বাংলাদেশে ‘ডিপোর্ট’ করার কোনও চেষ্টা হবে কিনা, এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও জবাব দেয়নি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) দিল্লির জওহর ভবনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ের সরকারের মুখপাত্র রবীশ কুমার সেখানে দাবি করেন, এ ব্যাপারে আগাগোড়াই তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন এবং দুদেশের সম্পর্কেও এর কোনও বিরূপ প্রভাব পড়বে না।
এক প্রশ্নের জবাবে রবীশ কুমার বলেন, ‘আমি প্রথমেই বলতে চাই, এ বিষয়ে বেশি জল্পনা-কল্পনা না করাই সমীচীন। আমরা প্রথম থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলছি। এনআরসি খসড়া তৈরির আগেও যেমন কথা বলেছি, তেমনি খসড়া প্রকাশের পরেও ঢাকার সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছি যে এটা শুধু একটা খসড়া তালিকা মাত্র, যা প্রস্তুত করা হচ্ছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। আসামে নাগরিকদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া যে এখনও চলছে এবং শেষ হয়নি, সেটাও তাদের বলা হয়েছে।’
গত ৩০ জুলাই যে এনআরসির দ্বিতীয় তথা চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হয়েছে তাতে আসাম রাজ্যের ৪০ লাখ বাসিন্দার নাম বাদ পড়েছে। তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব এখন প্রশ্নের মুখে। আসামে এদের এখন সরাসরি ‘অবৈধ বিদেশি’ বলেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর দাবিও উঠছে কোনও কোনও মহল থেকে।
ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছেন, এনআরসি হলো ভারতে ‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ চিহ্নিত করার অভিযান।
তবে এনআরসি বিতর্ককে বাংলাদেশ প্রথম থেকেই ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে বর্ণনা করে এসেছে। তবে মুখে সেটা বলা হলেও এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের দিক থেকেও যে একটা উদ্বেগ কাজ করেছে এবং বিষয়টি তারা দিল্লির কাছেও উত্থাপন করেছে, রবীশ কুমারের কথা থেকে তা স্পষ্ট।
রবীশ কুমার বলেন, ‘বাংলাদেশও এ কথা বিশ্বাস করে যে এনআরসি পুরোপুরি ভারতের নিজস্ব বিষয়। আর একে কেন্দ্র করে আমাদের দুই দেশের সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়ার কোনও আশঙ্কা নেই।’
তবে যারা শেষ পর্যন্ত আসামের নাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবেন না, তাদের বাংলাদেশে পুশব্যাক বা ডিপোর্ট করার কোনও চেষ্টা হবে কিনা, একাধিকবার এ প্রশ্ন করা হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এর জবাব এড়িয়ে যান।
এ সপ্তাহেই বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ভারত সরকারের আমন্ত্রণে দিল্লি সফরে এসে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের সঙ্গে বৈঠকেও এই এনআরসি প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। পরে তিনি নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের জানান, ভারত সরকার তাকে আশ্বাস দিয়েছে আসামে নাগরিক তালিকায় যাদের নাম বাদ পড়বে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর কোনও চেষ্টা হবে না।
নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর এই বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও ভারত সরকারের মুখপাত্র রবীশ কুমার তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ফলে বাংলাদেশে ডিপোর্টেশন বা পুশব্যাক নিয়ে ভারত যে এখনই সরকারিভাবে কোনও অঙ্গীকার করতে চাইছে না, তা স্পষ্ট।