বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে অংশ নিয়ে বক্তারা এমন মন্তব্য করেছেন। মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় বৈঠকিতে অংশ নেন কবি, গবেষক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মাসুদ পথিক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দেব নন্দী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনন জামান, কার্টুনিস্ট সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময়, সাংবাদিক ও গবেষক, আর্কাইভ ৭১ এর নির্বাহী পরিচালক প্রণব সাহা অপু এবং বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব রিসার্চ শেরিফ আল সায়ার।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর যে রাজনৈতিক দর্শন তা ভিজ্যুয়াল অর্থাৎ সিনেমার মাধ্যমেই খুব সহজভাবে তুলে ধরা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু শুধু আওয়ামী লীগের নয়, গোটা জাতির, সবার। এই চিন্তার জায়গা ধারণ করা উচিত আমাদের সবার। আর সেই জায়গা থেকে তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক কিছু করতে চাচ্ছে। আমি নিজেও তাকে নিয়ে গবেষণা করছি, তাকে নিয়ে একটি সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত তরুণরা বাধা পেতে পেতে একটি জায়গায় গিয়ে কিন্তু ঠেকে যায়। তারা প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। অনেক কিছু জানতে পারতাম না। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই দুটি প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানা সহজ করে দিয়েছেন। আমাদের কাছে এই দুটি বই পবিত্র গ্রন্থ।’
জয়দেব নন্দী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনুধাবন করাই হলো বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ব্যানার-ফেস্টুনের রাজনীতি, স্বার্থবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। যারা প্রকৃত অর্থে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করে তারা হাতুড়ি পেটার রাজনীতি করতে পারে না, মানুষ মারার রাজনীতি করতে পারে না। এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’
তিনি বলেন ‘বর্তমানের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কত রকমই না প্রটোকল পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যে কেউ ইচ্ছা করলেই দেখা করতে পারতেন। কতটা সহজ ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু যখন বিশাল সমাবেশে কথা বলতেন তখন তুই, তুমি করে কথা বলতেন। এর মানে গোটা সমাবেশের সবাই তার পরিবার। নিজের পরিবারের মানুষ।’
আনন জামান আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি বলা হয়। তার কথা, কথা বলার স্টাইল কবিতার মতোই। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু কোনও দলের হতে পারে না, বঙ্গবন্ধু সবার। তিনি রাজনৈতিক দলেরও ঊর্ধ্বে।
রাশাদ ইমাম আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, সারা পৃথিবীতে প্রতিটি দেশ তাদের বিখ্যাত ব্যক্তিদের আদর্শগতভাবেই ধারণ করে। সিনেমা, গবেষণা, ছবির মাধ্যমে তাদের স্মরণ করে এবং অন্যদের জানায়। আমাদের দেশে শুধু বঙ্গবন্ধুই নয়, অন্য এমন বড় বড় মহান ব্যক্তিরা আছেন তাদের নিয়েও এমন গবেষণা ও সিনেমা হতে পারে। তাদের সম্পর্কে সবাইকে জানানোর ব্যবস্থা করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো এই প্রজন্ম, যে প্রজন্ম বিটিভিতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে বড় হয়েছি। সেই মানুষটির কাছে তো ফিরতেই হবে।’ প্রণব সাহা অপু বলেন, ‘আমরা এক সময় কিছু মানুষের কারণে ২১ বছর বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে পারিনি। কিন্তু তারা এখন কোথায়? তারা কি নেই? মাসুদ পথিক সিনেমা বানানোর চিন্তা করছেন। কিন্তু তাকে মুখোমুখি হতে হবে সেন্সরবোর্ডের। সেই সেন্সরবোর্ডের মুখগুলোকে আমি দেখেছি, কারণ আমিও একটি ডকুমেন্টারি বানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে বিস্তৃতি বর্তমান সমাজে এমনকি গণমাধ্যমে তা তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই এসেছে। ফলে এখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সিনেমা হচ্ছে, গান হচ্ছে, গবেষণা হচ্ছে। এর আগে ২১ বছর বঙ্গবন্ধুকে আড়াল করে রাখা হয়েছিল।’
শেরিফ আল সায়ার বলেন, ‘আমি খুব ছোটবেলায় প্রথম শেখ মুজিবের ভাষণ শুনেছিলাম। তখন নিজেই ভেবেছিলাম এমন একটি ভাষণ কেন এতদিন সেভাবে আমরা শুনতে পাইনি। তখন জেনেছি, এই একটি ভাষণকে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ১৯৭৬ সালের দিকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে খবর প্রকাশিত হতো না। হলেও তার নামটি থাকতো একদম শেষ প্যারায়। আমার আক্ষেপ হলো, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এখনও কোনও সিনেমা তৈরি হয়নি। সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলেও দেশের কোনও পরিচালকের কাছে সেটার দায়িত্বও দেওয়া হয়নি- এটাও আমার আক্ষেপ। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে রাজনীতি যেভাবে কলুষিত হয়েছে তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কোনও মিল বর্তমান প্রজন্ম খুঁজে পায় না। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু কিন্তু সবার, তিনি শুধু আওয়ামী লীগের নয়।’