মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মেরাদিয়া, আফতাবনগর, কমলাপুর ও গাবতলী হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটভর্তি পশু। সিটি করপোরেশন নির্ধারিত এলাকা অতিক্রম করে আশপাশের অলিগলি ও খোলা জায়গায় পর্যন্ত হাট ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যে পরিমাণ পশু রয়েছে, সে পরিমাণ ক্রেতা চোখে পড়েনি। সকাল পেরিয়ে বিকালের দিকেও একই চিত্র বিরাজ করে। বিক্রেতারা পশু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম, ফলে পশুর দামও কমেছে।
সকাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব ক’টি হাট ঘুরেছেন সংস্থার সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন এবিএম শফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেরাদিয়া হাটে পর্যাপ্ত পশু দেখেছি। কিন্তু সে পরিমাণ ক্রেতা চোখে পড়েনি। আর কমলাপুর, খিলগাঁও ও রহমতগঞ্জ হাজারীবাগ হাটে পশু এবং ক্রেতা উভয়ই কম দেখা গেছে।’
গাবতলী হাটেও পর্যাপ্ত পশু দেখা গেছে। এই হাটটিতে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানবাহী পশু জোর করে নামিয়ে হাটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু পশুর তুলনায় ক্রেতা চোখে পড়েনি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাবতলী হাটে অনেক পশু আছে। কিন্তু ক্রেতা তেমন নেই। দামও অনেক কম। ভারতীয় ও মিয়ানমারের লাখ লাখ গরু আসার কারণে চাহিদা পূরণ হয়ে গেছে। এ কারণে এখনও ব্যাপারীদের অনেক গরু রয়ে গেছে। এমন তথ্য আমি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও পেয়েছি।’
কমলাপুর হাটে গরু ব্যবসায়ী হাফিজুল ইসলাম জানান, তারা পাঁচজন মিলে কুষ্টিয়া থেকে ৪২টি গরু নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে এখনও সাতটি বিক্রি হয়নি। তিনি বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত হাটে ভালোই দাম ছিল। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে হাটে ক্রেতা নেই। যেসব ক্রেতা আসছেন, তারা দাম বলছেন কম। এছাড়া, সোমবার মাঝারি সাইজের গরুর দাম ৭০ হাজার টাকা উঠলেও লোকসান হওয়ার আশঙ্কায় বিক্রি করিনি। আজ ক্রেতারা সেই গরুর দাম বলছে সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার টাকা।’
বনশ্রী থেকে খিলগাঁও হাটে গরু কিনতে এসেছেন গেলাম রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধুসহ এই হাটে গতকালও এসেছি। তখন দাম বেশি মনে হয়েছিল। কিন্তু আজ দাম তুলনামূলক অনেক কম। কিন্তু কেনার মতো মানুষ দেখছি না।’
এদিকে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোরবানি পশুর হাটে পর্যাপ্ত পশু উঠলেও ক্রেতা দেখা যাচ্ছে না। বাংলা ট্রিবিউনের মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি তানজিল হাসান জানান, মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মুন্সীরহাটে গরু থাকলেও ক্রেতা নেই। সারাদিন পেরিয়ে গেলেও হাটে গরু বিক্রি হয়েছে মাত্র ছয়টি। মঙ্গলবার বিকালে হাটে সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।
তিনি জানান, একসময় মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এই হাট থেকেই বেশিরভাগ কোরবানির গরুর যোগান হতো। কিন্তু এখন হাটে বেশ কিছু গরু থাকলেও কোনও ক্রেতা নেই বলে জানান গরু ব্যবসায়ী ও হাটের ইজারাদাররা। ইজারাদারদের এক প্রতিনিধি জানান, শনিবারে হাটে ভালো বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে আর তেমন বেচাবিক্রি হয়নি।
একই অবস্থা দেখা গেছে, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌরসভার গরু হাটে। এই হাটে শেষ সময়েও ক্রেতা শূন্য দেখা গেছে। হাটের পরিস্থিতি— গরু আছে ক্রেতা নাই। ক্রেতাদের অভিযোগ— গরুর হাটে কাঁদা পানি, দালাল সিন্ডিকেট ও নিয়ম বহির্ভূত খাজনা আদায়ের কারণে ক্রেতারা ছোট ছোট বাজার থেকে পশু কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া সদরের হাটে গরুর ক্রেতা কম। ক্রেতাদের অভিযোগ— ইজারা বেশি হওয়ার কারণে তারা এখান থেকে গরু কিনছেন না। তবে ইজারাদারের লোকদের বক্তব্য ভিন্ন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঠবাড়িয়া বন্দর বাজারে গরুর হাট বসে দক্ষিণ বন্দর এলাকায়। গরুর হাটে ঈদুল আজহার সময় প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার গরু ওঠে এবং তা বিক্রিও হয়। গরু থেকে প্রতি একলাখ টাকায় পাঁচ হাজার টাকা করে রাখছে ইজারাদারের লোকেরা। ক্রেতা মিজানুর রহমান জানান, উপজেলার অন্যত্র থাকা গরুর হাটের একটি গরু যে দামেই বিক্রি করা হোক, তাতে মাত্র ৫০০ টাকা ইজারা রাখা হয়।
তিনি বলেন, ‘গরুর হাটসহ অন্যান্য হাট এবার তারা এককোটি ৪৪ লাখ ১২ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন, যার মূল ইজারাদার মজিবুর রহমান সিকদার।’