জনগণের ভরসাতেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করি: প্রধানমন্ত্রী

বক্তব্য রাখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভরসা ছিল বলেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘অনেকের ধারণা ছিল বিশ্বব্যাংকের তহবিল ছাড়া পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্ভব হবে না। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল দেশের জনগণ আমার পাশে থাকবে। জনগণই আমার শক্তি। জনগণ আমাকে সমর্থন দিয়েছেন বলেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর ৬০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

রবিবার (১৪ অক্টোবর) মুন্সীগঞ্জের মাওয়া টোলপ্লাজা সংলগ্ন গোলচত্বরে দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি এবং এর রেল সংযোগের নির্মাণকাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন ও রেল সংযোগসহ চারটি প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছা ছিল পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেল সেতু নির্মাণ করার। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি এ কাজে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। কিন্তু ড. ইউনূসের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর জন্য অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা কারও সাহায্য নেবো না। আমি পার্লামেন্টে ঘোষণা দিলাম। বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা। তারা আমাকে সহযোগিতা করলেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কাজ খুব স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এই সেতুর ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি আমাদের জন্য সৌভাগ্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে যারা সম্পৃক্ত তাদের ধন্যবাদ। যারা এ কাজের জন্য নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে দিয়েছেন আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। যারা জমি দিয়েছেন তাদের আমরা প্লট বরাদ্দ দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে আমাদের বহুমুখী সড়ক ও রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলোর নির্মাণকাজ চলছে। পদ্মা সেতু দিয়ে যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে মানুষ চলাচল করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। সেতুর ওপর দিয়ে চলা ট্রেন ভাঙ্গা-নড়াইল হয়ে যশোর যাবে। আবার আরেকটি লাইন ভাঙ্গা-শরীয়তপুর হয়ে বরিশাল যাবে। সেতুটি নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের প্রবৃদ্ধি আরও প্রায় ২ ভাগ বাড়বে। প্রবৃদ্ধি ১০ ভাগ হয়ে যেতে পারে। মানুষের অবস্থার আরও উন্নতি হবে। আর্থিক দুরবস্থা থাকবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গ্রামে গ্রামে মানুষকে সাহায্য দিচ্ছি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সহায়তা দিচ্ছি। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে। আমরা ডেল্টা প্লান-২১০০ প্রণয়ন করবো।’

এর আগে, রবিবার সকাল ১১টা ১৫ মিনিটের সময় প্রধানমন্ত্রী মাওয়ার অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে নামফলক উন্মোচন করেন। পদ্মা সেতুর চলমান কাজের পাশাপাশি রেল সংযোগের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, এক্সপ্রেসওয়ে পরিদর্শন ও নদীশাসন প্রকল্পও উদ্বোধন করেন তিনি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, সেনাবাহিনী প্রধান আব্দুল আজিজ, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, আওয়ামী লীগ জেলা সভাপতি মো. মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্থানীয় নেতারা।