দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘ঐক্যে বিভক্তি’ শীর্ষক বৈঠকিতে এমন অভিমত দেন বক্তারা।
মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হয় বাংলা ট্রিবিউনের সাপ্তাহিক এ আয়োজন। রাজধানীর পান্থপথে বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিও থেকে এ বৈঠকি সরাসরি সম্প্রচার করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজ। পাশাপাশি বাংলা ট্রিবিউনের ফেসবুক ও হোমপেজে লাইভ দেখানো হয় এ আয়োজন।
‘ঐক্যে বিভক্তি’ শীর্ষক বৈঠকিতে অংশ নেন দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওয়ামী লীগের উপ দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এবং বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল।
তিনি বলেন, ‘পুরো বিষয়টিতে আমি দেখি একটি ইতিবাচক দিক। মাহী বি চৌধুরীদের কোনোভাবেই এই জোটে যাওয়া সম্ভব না। কারণ, বিএনপির নেতৃত্বে এখন আছেন তারেক রহমান, তিনি লন্ডন থেকে দলটি চালাচ্ছেন। তারেক রহমানের যে সমীকরণ, যেভাবে সে রাজনীতিকে গড়ে তুলছে তার সঙ্গে বিকল্পধারা কোনোভাবেই যেতে পারে না। ফলে উনাদের যে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে, উনারা অনেক পরে বুঝতে পেরেছেন ড. কামাল হোসেনের বাসায় গিয়ে। বিবিসিকে দেওয়া মির্জা ফখরুলের বক্তব্য শুনলে বোঝা যায় বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে কেউ একজন খেলা খেলছেন।’
বিকল্পধারা বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী বলেন, ‘আজকে যে ঐক্য হয়েছে সেখানেও কনভেনিয়েন্স আছে নাকি— এই প্রশ্নটা অবাস্তব নয়। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে আওয়ামী লীগ নূর হোসেন দিবস পালন করে, সেই আওয়ামী লীগ আবার জাতীয় পার্টিকে সরকারে রাখে আবার বিরোধী দলে। প্রধান দুটি দলই নীতি-আদর্শকে বাইরে রেখে পলিটিক্স অব কনভিনিয়েন্টের চর্চা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন দেখতে চায় না। এটাও সত্য, এ দেশের মানুষ মাগুরা কিংবা ঢাকা ১০-এর মতো নির্বাচনও দেখতে চায় না। বাংলাদেশের মানুষ ব্যাংকে রাখা সোনা তামা হয়ে যাবে— সেই দুর্নীতি আর দেখতে চায় না। বাংলাদেশের মানুষ খাম্বা ব্যবসার নামে হাজার হাজার কোটি টাকার পাচার দেখতে চায় না।’
তিনি বলেন, ‘সেজন্যই পরিবর্তনের কথা বলছি, একটা জাতীয় বৃহত্তর ঐক্য হবে। আমরাও কিন্তু কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বিএনপি থেকে বেরিয়ে বিকল্পধারা বাংলাদেশ করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম একদিকে হাওয়া ভবন, আরেকদিকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে দেশ পরিচালিত হতে পারে না। আজকে যখন জাতীয় স্বার্থে একটি নির্বাচন আদায় করতে হবে, আমিও বিশ্বাস করেছিলাম একটি জাতীয় কিংবা বৃহত্তর ঐক্যে পরিণত হবে একই দাবিতে। আজকে বিএনপির মতো দলকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় বসানো যাবে না— এই বিষয়গুলোর সঙ্গে ড. কামাল হোসেন এবং আমরা একমত হয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বার বার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। আমরা কোনও ষড়যন্ত্র করি না। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতির বৈধতা দিতে, খুনের রাজনীতির বৈধতা দিতে, খুনিদের শনাক্ত করার জন্য এই ঐক্য রচিত হয়েছে; বাংলাদেশের জনগণ অবশ্যই গ্রহণ করবে না।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আজকে আত্মরক্ষায় আছে। এটা ২০১৮ সাল, ২০১৪ সাল নয়। এটা আওয়ামী লীগকে মনে রাখতে হবে। জনগণ আওয়ামী লীগকে ছাড়বে না।’
গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, ‘এখানে বলা হয়েছে ড. কামাল হোসেন ট্র্যাপে পড়েছেন, আমি দুইজনেরই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলতে চাই, ড. কামাল তাহলে সঠিক পথে আছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ঘোষণা অত্যন্ত স্পষ্ট। আমরা ঐক্য করেছি বিএনপির সঙ্গে, যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে। আমরা মনে করছি, বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে, তারা বিগত সময়ে যে নির্বাচন করেছে, সেই নির্বাচনগুলো থেকে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। দলীয় সরকারের অধীনে এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সেই অবস্থান থেকে আমরা বলছি, একটা জাতীয় ঐক্য হওয়া প্রয়োজন। অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আজকের বৃহত্তর ঐক্য এবং ঐক্যের মাধ্যমে আন্দোলনে যাওয়া।’
জুলফিকার রাসেল বলেন, ‘সরকারের কী দরকার? সরকারের একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার। সেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে কয়েকটা দল অংশগ্রহণ করলেই হয়। সেখানে ড. কামালের জোট নির্বাচনে এলে গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করা হয়।’