দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় ‘প্রেক্ষাপট ৭ নভেম্বর’ শীর্ষক বৈঠকিতে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।
মাহজাবিন খালেদ বলেন, ‘আমার মনে আছে আমি তখন ছোট ছিলাম। তখন আমার মা ৭ নভেম্বরের কথা খুব একটা বলতেন না। তিনি তার স্বামী খালেদ মোশাররফ মানে আমার বাবার নৃশংস হত্যাকাণ্ড মেনে নিতে পারেননি।’
তিনি আরও জানান, ‘আমার বাবা খালেদ মোশাররফের একটি ছবিও আমার মা পাননি। ঘর সম্পূর্ণ খালি করে দেওয়া হয়েছিল। এখন বাবার যেসব ছবি দেখি সেগুলো অন্যদের কাছে ছিল, সেগুলোই দেখি।’
বৈঠকিতে নিজের বাবাসহ ৭ নভেম্বর যেসব মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার, চার নেতার হত্যার বিচার হচ্ছে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচার হচ্ছে অথচ ৭ নভেম্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার বিচার করা হচ্ছে না। এই বিচার করতে সরকারেরও সদিচ্ছা থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই দুই সন্তানের বাবা সেই সময় আমাদের প্রতিপক্ষ ছিলেন। তবু তখন কার কী ভূমিকা ছিল তা বোঝা কঠিন। ফলে বর্তমানে ওই সময়ের বিষয়ে কথা বলা কঠিন। তখন রাজনীতির পট ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হতো। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই দিবসটিকে আমরা বিভিন্নভাবে পালন করি। এ নিয়ে একটি মীমাংসায় আসা উচিত। ওই দ্বন্দ্বের মধ্যে থেকে বের হয়ে একটি সমঝোতায় আসা উচিত। কেউ এই দিনটিকে বলেছেন সংহতি দিবস। কেউ বলছেন বিপ্লব দিবস। অন্যদিকে কেউ বলছেন মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস। আবার কেউ কেউ সিপাহী-জনতার অভ্যুদয় দিবসও বলেন। আর এভাবেই ‘পলিটিক্যাল মাইলেজ’ চিন্তা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৭ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত ছিল। এটা এখনও করা উচিত। এটা থেকে পলিটিক্যাল ফায়দা নিতে চেয়ে ক্ষমতার পালাবদল বললে শেষ হয়ে যাবে না। হয়তো এখনও দেশের আর্কাইভে অনেক তথ্য আছে, গোয়েন্দাদের কাছে অনেক তথ্য আছে। সেগুলোর আলোকে তদন্ত হওয়া উচিত।’
নাহিদ নাজমুল হুদা বলেন, “আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর তিনি যুদ্ধে চলে যান। আমি তখন ৩ মাসের শিশু। মা বলেছেন, ‘বাবা আমাদের কথা চিন্তাও করেননি।’ এর ৯ মাস পরে তিনি ফিরলেন। একটি স্বাধীন দেশের পতাকা উপহার দিলেন।”
তিনি বলেন, ‘বাবা সর্বশেষ রংপুরের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর তারিখ সকালে বাবা বাড়ি থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ওইদিনই বাবাকে হত্যা করা হয়। ১০ নভেম্বর আমরা ঢাকায় আসি। আমার মা জিয়াউর রহমানকে ফোন করলেন, তার স্বামীর মরদেহ যেন দেওয়া হয়। তিনি রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু বলেছিলেন, তার মরদেহ নেওয়ার জন্য আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। আমার মা বলেছিলেন, তাদের বুকের কাছে যেন জাতীয় পতাকা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি তা দেননি। এরপর বাবার মরদেহ আনা হলো- একটি সাদা কাপড়ে তা মোড়ানো ছিল। তখন আমার বয়স ৫ বছর। আমার সব মনে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ৭ নভেম্বর দেশে সরকারি ছুটির দিন পালন করা হতো। আসলে আমরা একটি অভাগা জাতি।’
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান ও একটি সরকারের পতনের কথায় যেতে চাই না। এখানে উপস্থিত দুইজন আলোচকের বাবা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। তারাই দেশের পতাকা হাতে করে ফিরেছিলেন। তাদের হত্যা করা হয়েছিল। আসলেই ৭ নভেম্বর একটি কলঙ্কময় দিন।’
তিনি বলেন, ‘ওই সময় জাতির কাছে একদিকে ছিল বঙ্গবন্ধুর লাশ, অন্যদিকে চার নেতার লাশ। আসলেই আমরা দুর্ভাগা।’