সম্পর্কোন্নয়নে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীবাংলাদেশ বর্তমানে ‘অর্থনৈতিক কূটনীতিতে’ জোর দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং গুডস’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। এর আলোকে বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি কূটনীতিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেসব দেশের পণ্যের চাহিদার বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য। যাতে আমরা রফতানি বৃদ্ধি করতে পারি। এছাড়া ওই সব দেশের ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করার জন্য কাজ করতেও বাংলাদেশি কূটনীতিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আধুনিক ট্যানারি ও স্বতন্ত্র চামড়া শিল্প অঞ্চল গড়ে তোলা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে শিল্পাঞ্চলের উপযোগী স্থান নির্ধারণে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাঁর দল পুনঃনির্বাচিত হলে চামড়া শিল্পাঞ্চল ও ট্যানারি নির্মিত হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার সারাদেশে একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে যাতে দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিনিয়োগ হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’

দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত ট্যালেন্ট। তারা কিন্তু যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে। একটু সুযোগ দিলে তারা নিজেদের যেকোনও বিষয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারে। সেই সুযোগটাও আমাদের সৃষ্টি করে দিতে হবে এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’

দেশের উৎপাদন ও রফতানি বাড়ানোর দিকগুলোও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রফতানি বাণিজ্যের দিকে লক্ষ রেখে আমি সবসময় মনে করি, আমাদের এক্সপোর্ট বাস্কেট বাড়াতে হবে। তার জন্য বিশেষ বাজেটও দিতে হবে। আমরা যদি একটু প্রণোদনা না দেই, তাহলে কোনও ক্ষেত্রই সম্প্রসারিত হবে না। সেদিকে দৃষ্টি রেখে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কোন দেশের চাহিদা কী? কোন দেশে আমাদের কোন পণ্যটা বাজারজাত করতে পারি। তাহলে আমরা বিরাটভাবে বাজার সম্প্রসারণ করতে পারবো। এতে উৎপাদন বাড়বে। দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। সেইসঙ্গে এক্সপোর্টও বাড়বে। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বাড়বে। আরও অনেক অনেক টাকার মালিক আপনারা হতে পারবেন। সরকার আপনাদের সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।’

চামড়া শিল্পের সম্ভাবনা ও প্রসারণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ড বাংলাদেশেই তৈরি হয়। সেটা আবার তারা তাদের দেশে গিয়ে ফিনিশিং করে মার্কেটে ছেড়ে দেয়।’ এ প্রসঙ্গে তিনি অনুষ্ঠানে নিজের নিয়ে আসা ব্যাগটি দেখিয়ে বলেন, সেটা দেশে তৈরি চামড়ার ব্যাগ। বিদেশে গেলেও তিনি বাংলাদেশের তৈরি ব্যাগ নিয়েই যান। এ ধরণের একটি ব্যাগ জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলকে দেখিয়েছেন এবং তাকে বাংলাদেশের তৈরি এ ধরনের চামড়ার ব্যাগ উপহার দেওয়ার ইচ্ছার কথাও ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও বিনিয়োগের জন্য সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এ সময় আধুনিক পদ্ধতিতে চামড়ার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে চামড়া শিল্প মালিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি ব্যবসায়ীদের চামড়াজাত পণ্যের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোকে বাংলাদেশে শিল্প স্থাপনে আগ্রহী করতে কাজ করারও পরামর্শ দেন।

অনুষ্ঠানে সরকারের বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।