মিয়ানমারে সংঘটিত অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ করবে জাতিসংঘ

জাতিসংঘ কার্যালয়মিয়ানমারে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহের জন্য জাতিসংঘ খুব দ্রুত একটি কমিটি গঠন করবে। এ কমিটি গঠন করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য জাতিসংঘের পঞ্চম কমিটিতে আলোচনা চলছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কমিটি গঠনের জন্য ৬৫ জন লোকবলসহ এ বছরের বাজেটে ৫৫ মিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে। সদস্য দেশগুলি এটি নিয়ে আলোচনার পরে কিছুটা কাটছাঁট সাপেক্ষে তা পাস হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
এই বাজেট কবে নাগাদ পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ ডিসেম্বরের মধ্যে পাস হতে পারে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল ২০১১ থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারে যত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার প্রমাণ সংগ্রহের জন্য একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ মেকানিজম প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একমত হয়। এটি সিরিয়াতে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহের জন্য যে মেকানিজম আছে সেই আদলে তৈরি করা হবে। এই কমিটি কাজ শুরু করার পর প্রতি বছর মানবাধিকার কাউন্সিল এবং জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে তাদের বাৎসরিক রিপোর্ট পেশ করবে।’ এর মেয়াদ কতদিন থাকবে জিজ্ঞাসা করলে ওই কর্মকর্তা বলেন, এটি কমিটির চাহিদার ওপর নির্ভর করবে, কারণ কাউন্সিল কোনও বাধা-ধরা সময় বেঁধে দেয়নি।
এ বিষয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই প্রমাণাদি সংগ্রহ করা অত্যন্ত জরুরি কারণ ভবিষ্যতে ওই অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সময়ে এগুলি কাজে আসবে।’ তিনি বলেন, মিয়ানমার এই বিচার করতে পারে অথবা একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক আদালত অপরাধীদের বিচার করতে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত মিয়ানমারের অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি তদন্ত করছে এবং জাতিসংঘের এই উদ্যোগ তাদের সহায়তা করবে বলে তিনি জানান।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা গেলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ হবে, কারণ অন্য কোনও কিছু মিয়ানমার সামরিক বাহিনী তোয়াক্কা করে না।’
১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রথম ব্যাচ ফেরত যাওয়ার কথা থাকলেও একটি পরিবারও ফেরত যেতে রাজি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ‘প্রত্যাবাসন নাকি দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণ’ কোনটির ওপর জোর দেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে দুটোই জরুরি। আমরা প্রত্যাবাসনের জন্য চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু রোহিঙ্গারা যেতে রাজি নয়। এর অর্থ হলো রাখাইনে ফেরত যাওয়ার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়েছে এটি তারা বিশ্বাস করে না।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই প্রয়াস সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার পর্যাপ্ত করছে না। আমরা চেষ্টা করবো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আরও বেশি যোগাযোগ রাখতে যাতে তারা মিয়ানমারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বুঝতে হবে শুধুমাত্র নিন্দা বিবৃতি দিয়ে এই সমস্যা সমাধান করা যাবে না।’
রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি হওয়ার পরে প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবসময় বলে আসছে কিন্তু এখন সময় এসেছে শুধু কথা না বলে এই পরিবেশ কীভাবে তৈরি করা যায় সেই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়ার।