‘ইশতেহার জনগণকে দেওয়া রাজনৈতিক দলের ওয়াদা’






47323962_198578011021488_6127948806949437440_n (1)‘ইশতেহারের হচ্ছে একধরনের চুক্তি। জনগণ কিংবা ভোটারদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের একটি চুক্তি, একপ্রকার ওয়াদা; একটা ম্যান্ডেট দিচ্ছে। অর্থাৎ একধরনের ম্যান্ডেট দিচ্ছে যে তারা ক্ষমতায় গেলে এটা করতে দায়বদ্ধ। তার মানে উল্টো করে দেখলে ইশতেহার জবাবদিহিতার হাতিয়ারও বটে।’

দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে হওয়া ‘নির্বাচনের ইশতেহার’ শীর্ষক বৈঠকিতে এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক কাজী মারুফুল ইসলাম।
কাজী মারুফুল ইসলামমঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হয় বাংলা ট্রিবিউনের সাপ্তাহিক এই আয়োজন। এটি সঞ্চালনা করেন মুন্নী সাহা।
কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘ইশতেহারের হচ্ছে একধরনের চুক্তি। জনগণ কিংবা ভোটারদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের একটি চুক্তি, একপ্রকার ওয়াদা, একটা ম্যান্ডেট দিচ্ছে। অর্থাৎ একধরনের ম্যান্ডেট দিচ্ছে যে তারা ক্ষমতায় গেলে এটা করতে দায়বদ্ধ। তার মানে উল্টো করে দেখলে ইশতেহার জবাবদিহিতার হাতিয়ারও বটে।’
ড. সেলিম মাহমুদতিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এই মুহূর্তে একটা বড় সংকট হচ্ছে যারা ক্ষমতাসীন তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে কোনও ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি। যেটা নিয়ে আমরা ভুগছি। আমরা যেসব পরিবর্তন এনেছি সেসব পরিবর্তনের সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায় না। সাধারণ মানুষের কাছে সুবিধা পৌঁছাতে চাই তাহলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে একেবারে জনমুখী সমাধান চাই। তারা এই বিষয় কাজ করবে এবং আমাদের সেই জায়গায় নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’
আসাদুজ্জামান রিপনআওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, “আওয়ামী লীগের ইশতেহারে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার মতো বিষয় থাকবে। আমাদের ইশতেহার প্রায় শেষ পর্যায়ে। ১০ ডিসেম্বরের পর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ঘোষণা করবেন। নির্বাচনি ইশতেহারে অবশ্যই চমক থাকবে। ২০১৪ সালে প্রায় ৫০ পৃষ্ঠার মতো ইশতেহার ছিল। এবার আমাদের এমন কিছু থাকবে, এই প্রজন্মের তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করবে। নতুন ভোটারদের প্রত্যাশা কিন্তু শুধুমাত্র চাকরি না। যেই স্বপ্নটা দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, ‘তোমরা চাকরির পেছনে ছুটছো কেন, তোমাকে আমরা এমনভাবে তৈরি করতে চাই যে তুমি নিজেই এক হাজার মানুষকে চাকরি দিতে পারো।’ সেই চিন্তাভাবনা কিন্তু এখন তরুণদের মধ্যে তৈরি হয়েছে।”
ডা. জাহেদ উর রহমানবিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘সম্ভাবনাটা হচ্ছে স্বপ্ন দেখার ওপর। তবে আমি এমন এক জায়গার সঙ্গে একমত হবো সেটা হলো, এমন কোনও স্বপ্ন আমাদের দেখা উচিত হবে না যেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো না। আমাদের পার্টি থেকে কল্যাণ রাষ্ট্রের একটা ভাবনার কথা বলা হয়েছে এবং আমরা খুব জোরেশোরে কল্যাণ রাষ্ট্রের কথা বলছি, আমরা অর্থনীতির সাম্যের কথা বলছি, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার কথা বলছি। আমার মতে, এই রাষ্ট্র ৩০০ মানুষের রাষ্ট্র হওয়া উচিত না, এই রাষ্ট্র ১৬ কোটি মানুষের হওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইশতেহারে গুরুত্ব যেটা দিতে চাই সেটা হলো আমরা যদি সরকার গঠন করি সেটা হবে সুসরকার। সুসরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে তার আগে দরকার সুরাজনীতি। বর্তমানে যে রাজনীতি চলছে, কাদা ছোড়াছুড়ি কিংবা ব্লেম গেমের রাজনীতি চলছে, কত বাজেভাবে একে অপরকে দমন করা যায়—এই জিনিসগুলো সুরাহার আবহাওয়া ফিরিয়ে আনতে চাই।’
সালমান তারেক শাকিলজাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি ও ইশতেহার কমিটির সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘ইশতেহার প্রণয়নের প্রশ্নে যেহেতু বিএনপির প্রতিনিধি দুই জায়গাতে আছে, সেহেতু আমাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু হবে না। আমরা যখন জানতে পেরেছি ২০ দল ইশতেহার করবে তখন আমরা অস্বস্তিতে পড়িনি, আমরা জানতে চেয়েছিলাম এবং সেটার খুব ভালো জবাব আমরা পেয়েছি। ব্যাখ্যাটা আমাদের সন্তুষ্ট করেছে। আমাদের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কিন্তু খুব বেশি দিন হয়নি যে আমরা বিএনপির সঙ্গে জোট করেছি। কিন্তু ২০ দলীয় জোট অনেক আগে আছে এবং আগে থেকেই তারা ইশতেহার প্রণয়নের কাজ করছে। যদি আলাদাভাবে ২০ দলীয় আসে, সেটা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো আমাদের চিন্তাগত কতটুকু মিল আছে। তবে এটুকু নিশ্চিন্তে বলতে পারি, যেহেতু বিএনপির প্রতিনিধি দুই জায়গাতে আছে, আমাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু হবে না। আলাদাভাবে প্রকাশিত হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সবাই যেহেতু ধানের শীষে নির্বাচন করছেন, ধানের শীষে নির্বাচন যারা করছেন তাদের একটি সমন্বিত ইশতেহার হতেই পারে।’
মুন্নী সাহাবাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার সালমান তারেক শাকিল বলেন, ‘একজন সাংবাদিক হিসেবে রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের প্রতিযোগিতা দেখতে চাই। স্বাধীনতার পর থেকে দেখেছি ইশতেহার হয়ে যায় গণতন্ত্র উদ্ধারের। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ বিএনপির বিরুদ্ধে, বিএনপি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এবং এটাই প্রচারণার মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। আমরা আসলে একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের প্রতিযোগিতা দেখতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে ইশতেহারের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাপারটা আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথম অনুভব করি, যখন আওয়ামী লীগ দিনবদলের সনদ দেয়। ইশতেহার মোটাদাগে তরুণ ভোটাররা দেখে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের জন্য কী প্রতিশ্রুতি দেয় এবং কী বাস্তবায়ন করে। ধারণা করা যায়, দলগুলোর ইশতেহারে বিগত দিনের তাদের যে কর্মকাণ্ড, তাদের যে উন্নয়নের বিবরণ সেটাকে সামনে রেখে তরুণ সমাজ সিদ্ধান্ত নেবে।’