সফলতা ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রীঅনেকে ঘাত-প্রতিঘাত ও বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশকে সফলতার পথে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সফলতার এই ধারাবাহিতকতা অব্যাহত রাখতে হবে। সবার কাছে দাবি, বাংলাদেশের উন্নয়নের যে ধারা সূচিত হয়েছে, তা যেন অব্যাহত থাকে। এমনভাবে পরিকল্পনা রেখে যাচ্ছি, যেন এই দেশকে আর কখনও পেছনে ফিরে তাকাতে না হয়। সামনের দিকে যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে।’

বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে ১০৭তম, ১০৮তম ও ১০৯তম আইন এবং প্রশাসন কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সরকার প্রধান বলেন, ‘সরকার গঠনের পর দেশের মানুষের ভাগ্য কীভাবে গড়বো সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছি। চেষ্টা করলে যে পারা যায়, সেটা প্রমাণ করেছি। কিন্তু অন্যরা শুধু নিজের ভাগ্য গড়ার কথা চিন্তা করেছে। তাই দেশকেও এগিয়ে নিতে পারেনি। সেখানে আমাদের সরকার দেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছে, শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কিন্তু অতীতের সরকারে থাকা ব্যক্তিরা ক্ষমতাকে হাতে নিয়ে শুধু নিজের ব্যবসা করতে চেয়েছে। আমদানি করতে গিয়ে কমিশন নেয়া বা ব্যবসার কথা ভেবেছে। যে কারণে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করেনি। কিন্তু আমরা চিন্তা করেছি আমাদের দেশে উৎপাদন বাড়াতে হবে, যেন দেশের মানুষের কোনও খাদ্যের কষ্ট না হয়। তাদের বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার কষ্ট না হয়। সেভাবেই চিন্তা করেই প্রতিটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি বলেই এই অর্জনগুলো সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ যে উন্নত হতে পারে, সম্মানজনক অবস্থানে যেতে পারে, বাংলাদেশ যে স্বাধীন একটি দেশ হিসাবে মর্যাদা অর্জন করতে পারে, সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করি বলেই উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান অর্জন করতে পেরেছে। দেশপ্রেম, জনগণের প্রতি ভালবাসা, জনগণের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ নিয়ে কাজ করেছি বলেই এই সম্মান আনতে পেরেছি। এটা ধরে রাখতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে মর্যাদা পেয়েছি, আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এগিয়ে যাবো। আমরা মর্যাদা নিয়ে চলবো। কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। আমরা মাথা উঁচু করে বিশ্বে চলবো।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেকেই বাংলাদেশকে একটু খাটো করে দেখাতে পারলে ছোট করে দেখাতে পারলেই যেন আত্মতৃপ্তি পান? এটা কেন হয় জানি না! আসলে কিছু লোক তো আছেই এই দরিদ্র মানুষগুলোর হাড্ডিসার-কঙ্কালসার অবস্থাটা দেখিয়ে দেখিয়ে ব্যবসা করে। তারা কিছু পয়সা আনে এবং সে পয়সা দিয়ে মানুষকে কতটুকু উপকার করে জানি না কিন্তু নিজেদের উপকার হয়। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য, আমার দেশের মানুষকে কেউ ছোট চোখে খাটো করে দেখবে না। এটা আমি কখনও বরদাশত করতে পারি না। আমার কাছে বিষয়টি কখনও গ্রহণযোগ্য না।’

প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময় একটা কথা মনে রাখবেন, সততাই শক্তি। আর দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ, দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ নিয়েই কাজ করতে হবে। আর দেশটাকে সবসময় এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন বাংলাদেশ মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন ফোরজিতে পৌঁছে গেছি। স্যাটেলাইট এসে গেছে। দারিদ্র হার ২১ ভাগে নামিয়েছি। এখন ফাইভজির দিকে এগিয়ে যেতে হবে। দারিদ্রের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে।

জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই ক্ষুধামুক্ত আমরা করেছি, ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্রমুক্ত করতে সক্ষম হবো। কিন্তু সেটাকে আমাদের স্থায়ী করতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যেন উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতির পিতা শেখ মুজিবের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা এসেছে। এ স্বাধীনতা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। যেটা ব্যর্থ করার জন্য ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল। এটা ব্যর্থ করার জন্য বারবার ক্যু হয়েছে। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত অনেক বাধা অতিক্রম করেই আমরা বাংলাদেশকে সফলতার পথে এগিয়ে নিতে পারছি। এই সফলতার ধারাবাহিতকতা অব্যাহত রাখতে হবে। আমি সবার কাছে সেই দাবি করে যাচ্ছি, যদি এতটুকু ভাল কাজ কারো জন্য করে থাকি, তাহলে অন্তত এইটুকু চাই, বাংলাদেশের উন্নয়নের এ গতিধারাটা যেন অব্যাহত থাকে। দেশের মানুষ যেন ভাল থাকে, সুন্দর থাকে।

অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমেদ, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।