পাকিস্তানকে তাদের ভুল বুঝতে হবে, সংশোধন করতে হবে





বাংলাদেশ-পাকিস্তান


১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর চালানো নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি করে যাবে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, পাকিস্তানকে তাদের ভুল বুঝতে হবে এবং সেগুলো সংশোধন করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের ন্যায্য দাবি গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এবং গণহত্যা সংঘটিত করে। তাদের এই নৃশংসতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়। সেগুলো হলো নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা, সম্পদের বণ্টন এবং বিহারিদের প্রত্যাবাসন। কিন্তু এর একটিও পূরণ করেনি পাকিস্তান।
পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাকিস্তানকে তাদের ভুল বুঝতে হবে এবং সেগুলো সংশোধন করতে হবে।’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বাংলোদেশে যা করেছে তাতে তাদের বিচার হওয়া উচিত, কমপক্ষে মাফ চাওয়া উচিত। কিন্তু সেখানকার সেনাবাহিনী কোনও শিক্ষা নেয়নি, সেখানকার রাজনৈতিক সরকারও কিছু করবে বলে মনে হয় না।’
সম্পদ ভাগাভাগির বিষয়ে তৌহিদ হোসেন জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি যখন পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন তখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ঢাকায় এক বৈঠকে বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষে যুক্তি ছিল সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের পর ২০০ মিলিয়ন ডলার ত্রাণসহায়তা এসেছিল, যা স্টেট ব্যাংক পাকিস্তানের ঢাকা শাখায় সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু সেই টকা তারা নিয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি পররাষ্ট্র সচিব বলেছিলেন, আপনারা ডকুমেন্ট দিতে পারলে পাকিস্তান এই টাকা ফেরত দেবে।’
বিহারিদের প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘যে পাকিস্তান ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছে এবং তাদের যারা সহায়তা করেছে, তাদের ফেরত না নেওয়াটা অন্যায়। সেই সময়ে বিহারিদের ফেরত নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নেয়নি।’ তার মতে, পাকিস্তান এ ব্যাপারে কালক্ষেপনের পন্থায় হাঁটছে, যাতে আগামী ৫০ বছর পর বিষয়টি সবাই ভুলে যায়।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক উষ্ণ নয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মনে করে, এখনও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যারা সমাজে ঘাপটি মেরে আছে পাকিস্তান তাদের সহায়তা করে।
গত ১০ বছরে কয়েকটি মন্ত্রীপর্যায়ের সফর ছাড়া রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়নে তেমন কিছু দৃশ্যমান হয়নি।
২০১২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দাওয়াত করতে ঢাকায় এসেছিলেন। ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী যোগ দেন।
এর আগে শিক্ষামন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও স্পিকার ইসলামাবাদ সফর করেন। ২০১০ সালে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়।
ঢাকা চেম্বারের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশের আমদানি ছিল প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার এবং রফতানি ছিল ৫০ মিলিয়ন ডলার।