আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ‘সারাদেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি বিজিবি ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। কোথাও কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালালে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।’
রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে মানিক মিয়া এভিনিউর রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দেওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ ভোট দিচ্ছে। সবখানে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোনও ধরনের শঙ্কা বা হুমকি নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য সর্বত্র মোতায়েন রয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, শীতের কারণে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম রয়েছে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে ভোটার বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
সারাদেশের কয়েকটি ঘটনা প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের মন্তব্য, ‘মতবিরোধ হতে পারে। সারাদেশে নির্বাচন হচ্ছে। দু’একটি ঘটনা ঘটতেই পারে। এগুলো তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখছি আমরা।’
জানা গেছে, নির্বাচনের আগের রাতে চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের হামলায় যুবলীগকর্মী দ্বীন মোহাম্মদ নিহত হয়েছে। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নোয়াখালী-২ আসনের সোনাইমুড়ি উপজেলার নাটেশ্বরী ইউনিয়নের ইবতেদায়ি নুরানি মাদ্রাসা কেন্দ্রে হামলা করেছিল বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকরা। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
একই জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নে পূর্ব বাবুনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে রবিবার ভোরে দুর্বৃত্তরা নির্বাচনি সরাঞ্জামাদি লুট করার কারণে সেখানকার ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
এদিকে পোস্টার ছেড়াকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ক্যাম্প আর বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় দলটির অন্তত পাঁচজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
ভোটগ্রহণ শুরুর আগে রাঙামাটি জেলার কাউখালি উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বাছির উদ্দিন নিহত হয়েছেন। এছাড়া রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় যুবদলের নেতাকর্মীরা। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের হাতে সাইফুল ইসলাম নামে নিজেদের একজন কর্মী নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের।
সকালে ঢাকার বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নুন স্কুলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে গিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। নোয়াখালী, ভৈরব, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের কয়েকটি কেন্দ্রে গণ্ডগোলের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। নোয়াখালীর দুটি কেন্দ্রে গণ্ডগোল করে ব্যালট ও নির্বাচনি সরাঞ্জাম লুট করা হয়েছে। আমরা সেসব উদ্ধারের চেষ্টা করছি। এর বাইরে নির্বাচন উৎসবমুখর হচ্ছে।’
কয়েকটি কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইজিপির মন্তব্য, এ ধরনের ঘটনা হওয়ার কথা নয়। যদি ঘটেও তাহলে স্থানীয় পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে অবহিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। ১ হাজার ১১৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্য যেমন আনসার, গ্রামপুলিশসহ প্রায় সাত লাখ সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বিবেচনা করে সেসব এলাকায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। রাজধানীতে ২০ হাজার পুলিশ সদস্য ও ২৫ হাজার আনসার সদস্য মাঠে আছে। র্যাবের ১০ হাজার সদস্য ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।
রাজধানীর বনানীর বিদ্যা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শন শেষে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘খুব ভালো পরিস্থিতিতে ভোটগ্রহণ চলছে। ভোটাররা নিরাপদে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে। গতকাল রাতে দুটি কেন্দ্র ও আজ সকালে পাঁচটি ভোটকেন্দ্র বিশৃঙ্খলাকারীরা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে তা সফল হয়নি। ফলে ভোটাররা সকাল থেকে ভোট প্রদান শুরু করেছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘নির্বাচন এলেই একটি গোষ্ঠী গাড়িতে পেট্রোল বোমা ও আগুন দেয়। এসব বিষয় ভেবে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পরদিন র্যাবের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। ভোটকেন্দ্রে ও ভোটারদের নিরাপত্তায় আমরা নিয়োজিত আছি।’