ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটির চলমান প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওতাধীন নবসংযুক্ত শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল এবং সারুলিয়া এলাকার সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প; মাতুয়াইল সেনেটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণসহ ভূমি উন্নয়ন প্রকল্প; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আওতাধীন নবসংযুক্ত ডেমরা, মান্ডা, নাসিরাবাদ ও দক্ষিণগাঁও এলাকার সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পুনর্বাসনসহ নর্দমা ও ফুটপাত উন্নয়ন প্রকল্প।
এর মধ্যে তিনটি প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ ও একটি প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলেও বাকি প্রকল্পগুলো ২০১৬-১৯ অর্থবছরের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে।
তবে সংস্থাটির এক জরিপে দেখা গেছে বর্তমানে এসব কাজের মাত্র ৫৬ দশমিক ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দুটি প্রকল্পের কাজ শুরুই করতে পারেনি ডিএসসিসি। ডিএসসিসির এ সাতটি প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৩৮১ কোটি ২৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এ থেকে সরকার দিচ্ছে চার হাজার ১৬ কোটি ২৭ লাখ ৯৮ হাজর টাকা। বাকি ৩৬৪ কোটি ৯৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা দিয়েছে ডিএসসিসি। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৪৪ শতাংশ অর্থ খরচ হয়েছে।
২০১৬-১৯ সালের মধ্যেই এসব প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও গত তিন বছরে প্রকল্পের মাত্র ৬৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
এছাড়া ৭৭৩ কোটি ৯৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওতাধীন নবসংযুক্ত শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল এবং সারুলিয়া এলাকার সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৫২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার রাস্তা, ১৫৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নর্দমা, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ফুটপাত, ৭ হাজার ৬৩টি বৃক্ষ রোপণ ও ১৪৩ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার এলইডি লাইট স্থাপন করার কথা রয়েছে।
১০৭ কোটি ২৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৫৭ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন, ৬১ দশমিক ১০ কিলোমিটার নর্দমা উন্নয়ন ও ৮ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার ফুটপাত উন্নয়ন করা হবে। এই প্রকল্পের মেয়াদকালও ধরা হয়েছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পের আর মাত্র সাড়ে ৫ মাস বাকি থাকলেও এখনও ২৮ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে।
৭২৪ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে মাতুয়াইল সেনেটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণসহ ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমান ল্যান্ডফিলের পার্শ্ববর্তী ৮২ একর জমি অধিগ্রহণ ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।
২০১৭ সালের জানুয়ারি হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হলেও বর্তমানে প্রকল্পের মাত্র ৬৪ দশমিক ২৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
২৬৮ কোটি ৭৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় তিনটি আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার ও দুইটি সংস্কার করা হবে।
প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। তবে প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি।
৭৭৪ কোটি ৬৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পুনর্বাসনসহ নর্দমা ও ফুটপাত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৪৩ দশমিক ৪২ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন, ৫৮ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ, ২৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার ফুটপাত উন্নয়ন, ৫ দশমিক ২৩ কিলোমিটার মিডিয়ান নির্মাণ, ১৬৯ দশমকি ১০ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ এবং ৮৮ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার নর্দমনা উন্নয়ন করা হবে।
প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পেরও কাজ শুরু করা যায়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিচ্ছিন্নভাবে প্রকল্প নেওয়ার কোনও সুফল পাওয়া যাবে না। সিটি করপোরেশনের উচিৎ হবে কোনও প্রকল্প নেওয়ার আগে স্থানীয় অধিবাসী ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গণশুনানির মাধ্যমে সেগুলো অনুমোদন করা। স্থানীয়রাই সমাধান দিবে তার সড়ক, ফুটপাত বা পার্কটি কেমন হবে। তাই যে কোনও উন্নয়ন কাজ এলাকাবাসী ও পেশাজীবীদের নিয়ে কমপক্ষে একটি গণশুনানি হওয়া উচিৎ। শুধু বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে কোনও সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব নয়। টাকা অপচয় হবে।’
তিনি বলেন, যেসব প্রকল্প স্থানীয়দের সমন্বয়ে করা হয়েছে সেগুলোর সুফল জনগণ পেয়েছে এবং পাবে। উন্নয়ন কাজগুলো জনগণের সমন্বয়ে হলে এর সুফল পাবে জনগণ।