‘তদন্ত প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কায় রিজার্ভ চুরির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি’

 

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালবাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্ত যাতে প্রভাবিত না হয় সেজন্য ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চুরি যাওয়া রিজার্ভ উদ্ধারে কাজ চলমান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বিষয়ে ভবিষ্যতে যখনই কোনও অগ্রগতি হবে তা সংসদকে অবহিত করা হবে।



মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ার কারণসহ ঘটনার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে অর্থমন্ত্রীকে সংসদে ৩০০ বিধিতে বক্তব্য দেওয়ার দাবি করেছিলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার বৈঠকে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর অর্থমন্ত্রী ৩০০ বিধিতে বক্তব্য দেন।
রিজার্ভ চুরির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে আন্তর্জাতিক হ্যাকারদের মাধ্যমে আমাদের রিজার্ভের একটি অংশ শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনে পাচার করা হয়। তারা ৯৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের চেষ্টা চালায়। এর মধ্যে পাঁচটি ফলস পেমেন্ট ইন্সট্রাক্টরের মাধ্যমে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ট্রান্সফার সম্পন্ন হওয়ার পর নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বাকিগুলো বন্ধ করে দেয়। রিজার্ভ চুরির বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকার চুরি হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধার, চুরি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যৎ চুরি রোধে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়। তিনি দ্রুততার সঙ্গে সরকারকে রিপোর্টও দেন।’
ড. ফরাস উদ্দিনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করার কারণ ব্যাখ্যা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ড. ফরাস উদ্দিনের পাশাপাশি পুলিশের তদন্ত বিভাগকে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিআইডির তদন্ত কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছে। যে কারণে ড. ফরাস উদ্দিনের রিপোর্টটি ফৌজদারি তদন্ত কার্যক্রমে যাতে কোনও প্রভাব না ফেলে সেজন্য প্রকাশ করা হয়নি।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির বিষয়টি একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। এর সঙ্গে অনেক দেশ জড়িত আছে। এই বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও ফিলিপাইন সরকার তদন্তে নামে। এর ধারাবাহিকতায় শ্রীলঙ্কা থেকে ২০ মিলিয়ন ও ফিলিপাইন থেকে ১৪ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলার ফেরত আনা হয়েছে। বাকি ৬৬ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারে কার্যক্রম চলছে। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আমরা মামলা করেছি।’ রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণও পেয়েছে বলেও মন্ত্রী জানান।
স্পিকারকে উদ্দেশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চুরি যাওয়া রিজার্ভ উদ্ধারে কাজ এখনও চলমান। এই বিষয়ে ভবিষ্যতে যখনই কোনও অগ্রগতি হবে আপনার মাধ্যমে তা সংসদকে অবহিত করা হবে।’