যদিও বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, ‘চকবাজারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেখানে রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের (কেমিক্যাল) কোনও অস্তিত্ব নেই এবং কোনও গোডাউনও ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিমতলীর ঘটনা আর চকবাজারের ঘটনা একদম ভিন্ন। এটা কেমিক্যাল সম্পর্কিত কিছুই না। সিলিন্ডার থেকে এটা হয়েছে। আজকের ঘটনা ভিন্ন। এটা কেমিক্যাল সম্পর্কিত কিছুই না। আমি সরেজমিনে দেখে এসেছি। দিস ইজ ডিফারেন্ট স্টোরি।’
পাল্টাপাল্টি এসব বক্তবের মধ্যেই শুক্রবার হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের বেজমেন্টে ও বিপরীত পাশে রাজ্জাক ম্যানশনের নিচতলার একটি গোডাউনে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ভর্তি ড্রামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের বেজমেন্টে কেমিক্যালের মজুত আবিষ্কারের পর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের লালবাগ স্টেশনের কর্মকর্তা রতন কুমার দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা কেমিক্যাল গোডাউন পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে আমরা বেশ কিছু কেমিক্যাল ও দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ পেয়েছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে— আয়রন অক্সাইড, আয়েনিক ইয়েলো, আয়েনিক ব্লু, আয়েনিক রেড, অয়েল রেড, এসিড গ্রিন, রেড কালার পিগমেন্ট, ব্লু কালার পিগমেন্ট, ইয়েলো কালার পিগমেন্ট, কার্বন ইনজেনিরিয়াড। গুদামে আয়ন অক্সাইডের ছোট ছোট অনেকগুলো ড্রাম রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই কাগজের মোড়কে মোড়ানো ছিল। এসব কেমিক্যাল বিভিন্ন রংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘এই গোডাউনে কোনোভাবে যদি আগুন ঢুকতে পারতো, তাহলে অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে পারতো। এতে পুরো ভবনটি ধ্বসে পড়ে যেত। এছাড়া, আশপাশের বেশ কয়েকটি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক বেশি বেগ পেতে হতো। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’ তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান রতন কুমার দেবনাথ।
শুক্রবার সরেজমিনে হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের ওই গোডাউনের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, একদিকে সারিসারি বিভিন্ন কেমিক্যালের ড্রাম রাখা। আরেক দিকে রয়েছে আয়রন অক্সাইডের বেশ কয়েকটি ছোট ড্রাম। ভেতরে পুরো বেজমেন্টে কেমিক্যালের ড্রাম ও প্যাকেট গুদামজাত করা ছিল। ভেতরে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ। গোডাউনের কোথাও কোনও ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা দেখা যায়নি।
ওয়াহেদ ম্যানশনের উল্টোদিকে রাজ্জাক ভবনের বিপরীতে পুড়ে যাওয়া হায়দার ফার্মেসির পাশেই একটি সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে ভেতরে ঢুকে বাম দিকে একটি দরজা। সেই দরজা খুলতেই দেখা গেলো সারিসারি কেমিক্যালের ড্রাম। সঙ্গে থাকা ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানালেন, এই কেমিক্যালে আগুন লাগলে এই ভবন বিস্ফোরণ হতো। আগুনের তীব্রতা বেড়ে যেত আরও কয়েকগুণ। ক্ষয়ক্ষতিও হতো অনেক বেশি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ২০ বছর আগে হাজী ওয়াহেদ ম্যানশন নামের ভবনটি তৈরি করা হয়। ভবনের মূল মালিক হাজী ওয়াহেদের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে হাসান ও সোহেল মালিকানা পায়। তবে সোহেল প্রায় সময়ই চট্টগ্রামে থাকতেন এবং হাসান পরিবার নিয়ে ওই ভবনেই থাকতেন। এই দুই ভাই এবং তাদের পরিবার আগুনের হাত থেকে রেহাই পেলেও তারা বর্তমানে কোথায় আছেন তা জানা যায়নি। ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে কেমিক্যালের এই গোডাউনটি সোহেলের ছিল বলে স্থানীয়রা জানান।তবে গোডাউনটির প্রকৃত মালিক কে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।