দীর্ঘদিন ধরেই পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানাগুলো কেরানীগঞ্জে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ‘ঢাকা শিল্প নগরীতে’ স্থানান্তরের কথা বলা হচ্ছে। নিমতলী ট্র্যাজেডির পর এ প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে ৯ বছর পার হয়েছে। কিন্তু দৃশ্যমান কিছুই হয়নি। প্রশাসনের দাবি, কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের আপত্তির কারণে তা হয়নি। প্রশাসন-ব্যবসায়ীদের টানাটানির মধ্যে ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি ঘটে। এ ঘটনায় ফের বিসিক তোড়জোড় শুরু করেছে কেমিক্যাল পল্লির কাজ নিয়ে।
২০১০ সালে নিমতলীতে বিস্ফোরণে ১২৪ জনের প্রাণহানির পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য তৎপর হয়েছিল সরকার। ওই সময় কেমিক্যাল পল্লি তৈরির কথা বলা হয়। এরপর মন্ত্রী ও ঢাকার মেয়রসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা দফায় দফায় গুদাম সরানোর ঘোষণা দেন। কারখানা অপসারণে অভিযানও শুরু করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
২০১৭ সালের মার্চে নতুন করে কেমিক্যাল পল্লি তৈরির জন্য বিসিক দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নে ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে সোনাকান্দা মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাশে শিল্পপল্লি স্থাপনের কথা বলা হয়। কিন্তু প্রকল্প দুটি অনুমোদনে সময় লেগেছে প্রায় ৮ বছর। গত ৩০ আক্টোবর একনেক বৈঠকে প্রকল্পগুলো অনুমোদন পেলেও এখন পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ হয়নি। ছাড় দেওয়া হয়নি অর্থ। ফলে অনুমোদনের পর চার মাস পরও প্রকল্পের কোনও কাজ শুরু হয়নি। প্রকল্প দুটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।
এ ব্যাপারে বিসিকের চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম স্থানান্তরের জন্য কেরানীগঞ্জে একটি কেমিক্যাল শিল্প জোন গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। আমাদের লোক শিল্প জোনের সাইট নির্বাচন করেছে। এখন ডিসি কাগজপত্র প্রস্তুত করে জমি অধিগ্রহণ করে আমাদের হস্তান্তর করবেন। এরপর আমরা কাজ শুরু করবো।’
শুরু থেকে এ প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে আছেন বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার আমিনুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমি এলাকা পরিদর্শন করেছি। সেখানে কোনও ঘরবাড়ি নেই। বার্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকে। এটি বাবুবাজার ব্রিজ থেকে ৫-৭ কিলোমিটার দূরে কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নে অবস্থিত। সেখানে ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্রথমে জমিতে মাটি ভরাট করে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে প্রকল্প প্রস্তুত করা হবে। এতে ৯৩৬টি শিল্প প্লট তৈরি করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্লাস্টিক পদার্থের জন্য ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আমরা আরও একটি শিল্পনগরী গড়ে তোলার কাজ করছি। সেই প্রকল্পটিরও জমি অধিগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সেখানে প্লাস্টিকের কারখানাগুলো সরিয়ে নেবো।’
তিনি জানান, নিমতলীর ঘটনার পরেই কেমিক্যাল গুদামগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠিত হয়। একই বছরের ২০ জুলাই কমিটি প্রতিবেদন আকারে একটি সুপারিশ জমা দেয়।
এ প্রসঙ্গে খোন্দকার আমিনুজ্জামান বলেন, ‘ওই প্রকল্পের শুরুতে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের তিনটি সংগঠনকে আমাদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু তাতে মালিকরা সাড়া দেয়নি। প্রকল্প দীর্ঘায়িত হওয়ার এটাই কারণ। পরে আমরা ব্যর্থ হয়েই বিষয়গুলো নিয়ে আরও উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা করে উদ্যোগ নিই। এরপর ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির পছন্দে এই জমি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। আর ঢাকা শিল্পনগরীর পাশে যে ২০ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলোতে বর্তমানে শিল্প উদ্যোক্তরা জমি দখল করে ভবন তৈরি করে ফেলেছে। যে কারণে ওখানে আর কিছু করা সম্ভব নয়।’
শুক্রবার সকালে সরেজমিন কেরানীগঞ্জে বিসিকের ঢাকা শিল্পনগরী পরিদর্শন করে দেখা গেছে- প্রকল্প এলাকায় বেশ কয়েকটি প্লট খালি পড়ে আছে। সেখানে কোনও ঘরবাড়ি নেই। আর পেছনের অংশে রয়েছে ধলেশ্বরী নদী। নদী তীরের বিশাল অংশ অবৈধ দখলে রয়েছে।