রবিবার (১০ মার্চ) বিকালে বারিধারায় শাহরীন আহমেদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সেসময় এসব কথা বলেন তিনি। জানান, এখনও শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে তাকে।
শাহরীন বলেন, ‘আমি একাই নেপালে বেড়াতে গিয়েছিলাম। এটা শুনে অনেকে প্রশ্ন করেন, একটা মেয়ে একা কেন নেপালে বেড়াতে যাবে? আমরা যখন আকাশে তখনও কেউ বুঝতে পারিনি কী ঘটতে যাচ্ছে। পাইলট বেশ কয়েকবার ল্যান্ড করার চেষ্টা করেছিলেন। প্রথমবার ল্যান্ড করতে গিয়েও ওপরে উঠে গেল। তখন আমার পাশের সিটের যাত্রীকে বললাম ল্যান্ড করতে পারলো না কেন? কাঠমান্ডু এয়ারপোর্ট যে বিপজ্জনক সেটা আমার আইডিয়া ছিল না। দ্বিতীয়বার ল্যান্ড করার চেষ্টা করেও পারেননি পাইলট। শেষবার ল্যান্ডিংয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে বিমানটা বাম পাশে কাত হয়ে গেল। তখন আমি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম, বাম দিকে কেন কাত হলো? ক্র্যাশ করবে তো। বলতে বলতেই মাটিতে খুব জোরে বিমানটি ধাক্কা খেলো। আমার এখনও ওই আওয়াজটা কানে ভাসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধাক্কা লাগার অনেক পর অনেক দূর বিমানটি ছেঁচড়িয়ে যায় বিমানটি। এরপর আগুন ধরে যায়। আমার পিছে হাসি (ইমরানা কবির হাসি) ছিলেন। তিনি আগুন আগুন বলে চিৎকার করে ওঠেন। তখন আমরা আশেপাশে দেখতে লাগলাম। হাসির কাছে জানতে চাইলাম তার স্বামী কোথায়, সে বললো- নেই। চারপাশে তাকিয়ে দেখি বের হওয়ার কোনও রাস্তা নেই। তখন আমি হাসিকে বললাম, যত জোরে পারেন চিৎকার দেন, না হলে কেউ বুঝবে না আমরা যে বেঁচে আছি। হাসি আর আমি চিৎকার করতে থাকলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের উদ্ধার করতে কেউ আসলো। হাসি, আমি আর একজন ভদ্রলোক আমরা তিনজন সেখানে ছিলাম। পুরোটা সময় আমি সব দেখছি, বুঝতে পেরেছি।’
চিকিৎসা প্রসঙ্গে শাহরীন বলেন, ‘গত বছর ১৬ মার্চ আমি ঢাকায় ফিরি। নেপাল থেকে দেশের আনার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ২৫ দিনের মতো চিকিৎসা নিয়েছি। আমার পা ভেঙে গিয়েছিল,শরীর পুড়ে গিয়েছিল।’
সহযাত্রীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা এয়ারপোর্টে দেখেছিলাম নেপালের মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের। আমি যখন নেপালের হাসপাতলে তখন তাদের স্বজনরা আমার কাছে জানতে চাইতো তার সন্তানকে দেখেছি কিনা। কিন্তু তাদের বলার মতো কিছু ছিল না। এখনও বারাবার সেসব দিনের কথা মনে পড়ে।’
আরও পড়ুন:
ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্ত: আইনি জটিলতায় আটকে আছে ক্ষতিপূরণ