ডাকসুর নবনির্বাচিত নেতারা দায়িত্ব নেবেন যেভাবে

ডাকসুদীর্ঘ ২৮ বছর ১০ মাস পর সোমবার (১১ মার্চ) অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ছাত্রলীগ। ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ প্যানেলের প্রার্থী নুরুল হক নুর জয়ী। এছাড়া তার প্যানেল সমাজসেবা সম্পাদকের পদটি পেলেও বাকি ২৩টি পদেই জয়ী হয়েছে ছাত্রলীগ। এই নির্বাচনে ৬টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অংশ নিলেও ছাত্রদল, বাম দলগুলোর জোট, ছাত্র ফেডারেশনের প্রার্থীরা হল ও কেন্দ্রী সংসদের কোনও পদেই জয় পায়নি। অবশ্য সোমবার ভোট ভোট শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে নানা অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জন করে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা। আবার সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ভোট বর্জন করলেও ভিপি পদে নুর জয়ী হওয়ায় এখন ‘তার কুল রাখি না শ্যাম রাখি’ অবস্থা। একবার তিনি শপথ নিতে চাইছেন, আরেকবার নিজের পদসহ সব পদে পুনর্নির্বাচন চাইছেন। তবে এই নির্বাচন নিয়ে যত ডামাডোলই ঘটুক না কেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নির্বাচিতদের মেয়াদ হবে এক বছরের। আর এজন্য পৃথক কোনও শপথের বিধানও নেই।

ডাকসুর গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, নির্বাচিত কর্মকর্তারা এক সেশনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন এবং পরবর্তী নির্বাচিত নেতৃত্ব দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আগ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন।

ডাকসুর সাবেক নেতারা বলছেন, ডাকসু নির্বাচনের পর নতুন নেতৃত্ব শপথ গ্রহণ করার বিষয় হয়নি। শপথ গ্রহণ করার কোনও অনুষ্ঠানও হয়নি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উপস্থিতিতে অভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছে। অনুষ্ঠান আয়োজন করে সংশ্লিষ্ট বিজয়ী নেতৃত্ব।

মাহমুদুর রহমান মান্না ১৯৭৯ সালে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমার সময় তো কোনও শপথ নেওয়ার মতো কিছু হয়নি। দায়িত্ব হস্তান্তর বলেও কিছু হয়নি। আমরা বড় করে অভিষেক অনুষ্ঠান করেছিলাম। সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।’

ডাকসু গঠনতন্ত্রের ৬ (গ)  ধারা বলছে, ইউনিয়নের নির্বাচিত নেতৃবৃন্দরা এক সেশনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন এবং পরবর্তী নির্বাচিত নেতৃত্ব দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আগ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন।

ডাকসুর নির্বাচনে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার সহায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শপথের কোনও বিষয় নেই। তবে ডাকসুর সভাপতি মাননীয় উপাচার্য একটি সভা ডাকবেন। সেখানে দায়িত্ব দেওয়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।’

গঠনতন্ত্রের নিয়মে তিনদিনের মধ্যে উপাচার্যকে নির্বাচন নিয়ে কোনও সমস্যা থাকলে তা নিষ্পত্তি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে না হলে উপাচার্যের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

ইতোমধ্যে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্যানেলগুলোর নেতারা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিন দিনের একদিন পার হয়েছে। বাকি দুই দিনের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে জটিলতার নিষ্পত্তি না ঘটলে উপাচার্য এই নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত কী সিদ্ধান্তে যাবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। 

আরও পড়ুন:

যে কারণে ডাকসুতে নিজেদের নিরঙ্কুশ জয়ী ভাবছে ক্ষমতাসীনরা