একাদশ জাতীয় সংসদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর এবার উপজেলাতেও ভোটকেন্দ্রে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম থাকার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারায় অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব— এই আস্থা ফের জাগাতে পারলে তবেই ভোটাররা কেন্দ্রে ফিরে আসবেন।
সিলেট সদরের খাদিমপাড়া ইউনিয়নের ভোটার ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ভোট দিলেই কী আর না দিলেই কী? বাসার সবাইকে না করেছি ভোটকেন্দ্রে যেতে। কারণ, ভোটকেন্দ্রে হঠাৎ মারামারি শুরু হলে সমস্যায় পড়তে হবে।’
যদিও দিনশেষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের উপ-নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো কম ছিল। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েকটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন ভোটাররা। এছাড়া, নির্বাচনে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তাদেরকে ভোটকেন্দ্রে আনা যাচ্ছে না।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো.শাহনেওয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যখন নির্বাচনে বড় দল আসে না এবং বিভিন্ন পদে যারা দাঁড়িয়েছেন, তাদের মধ্যেই কেউ জিতবে বলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়, তখন ভোটাররা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। ভোটাররা এখন কতটা সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিতে পারবে— সেটি নিয়েও সন্দিহান হয়ে আছেন। ফলে তারা কেন্দ্রে যান না।’
এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের আস্থা ফেরাতে ভোটের পরিবেশ যে সুন্দর করা গেছে, সেই বোধটা গড়ে তুলতে হবে। রাজনীতিবিদদের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাতে হবে। কেবল একটা দল বড় থাকলে এবং বিপরীতে অন্য প্রার্থীরা যদি দুর্বল থাকেন, মানুষ কেন আগ্রহ ধরে রাখবে।’
যখন কোনও একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে মানুষ অংশগ্রহণ করে না, তখন সেই প্রক্রিয়ার ওপরে মানুষের আগ্রহ নেই বলে ধরে নিতে হয়— এমনটা মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। মানুষ কেন নিজেকে এই প্রক্রিয়াগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবতে শুরু করলো, সেটাও যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সমাধানের পথ খোঁজা জরুরি। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের অনুপস্থিতি বিষয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোর প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়েছে। ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে যদি ফলাফলে তার প্রতিফলন দেখতে না পান, তাহলে তিনি পরবর্তীতে আর ভোট দিতে যাবেন না— এটিই স্বাভাবিক।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে: ইসি সচিব