তবে রাজধানীতে ওই বাসটির চলাচলের কোনও অনুমতি ছিল না এবং বাসটির বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘সুপ্রভাত পরিবহনের বাসটির ঢাকায় চলাচলের অনুমতি ছিল না। বাসটির ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কে চলাচলের পারমিট ছিল। শুধু তাই নয়, ওই বাসটির বিরুদ্ধে ২৭ বার মামলা দেওয়া হয়েছিল।’
ডিএমপি কমিশনার এসময় প্রশ্ন রাখেন, ‘তাহলে সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসটি রাজধানীতে কীভাবে চলাচল করছিল? এই অনিয়মের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই দায়ী।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘যে জেব্রা ক্রসিং মানুষকে রাস্তা পারাপারে নিরাপদ করে, সেই জেব্রা ক্রসিংয়েই প্রাণ দিতে হলো আবরারকে। সুপ্রভাত গাড়িটি এই অপরাধও করেছে।’
কমিশনার বলেন, ‘ঢাকা শহরের পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই দায়ী। আবরারের মৃত্যু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এখন চূড়ান্ত সময় এসেছে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে।’
মালিক শ্রমিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘টিকিট কাউন্টার করে বাস চালান, লক্কর-ঝক্কর ও মডেলবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামাবেন না। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করুন। এসব না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে আর নয়। রাস্তার পাশে স্টপেজে গাড়িগুলোকে দাঁড় করান। সেখানে আড়াআড়িভাবে দাঁড়াবেন না। এটি করলে রেকারিং করে ডাম্পিং করা হবে। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’
কমিশনার বলেন, ‘রুটে ৫০টি গাড়ি চলার কথা, চলছে ৮০টি গাড়ি। এটি চলবে না। প্রয়োজনে সিলিং বাড়িয়ে দেন। তবুও আইন মেনে চলুন। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে ফৌজদারি মামলা দিন।’
তিনি বলেন, ‘মেইন রোডে লেগুনা ও অটোরিকশা চলবে না। শিশুরা কিভাবে গাড়ি চালায়, তা খতিয়ে দেখুন।’
শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কমিশনার বলেন, ‘ডিএমপি কোনও গাড়ি রিকুইজিশন করে না। গাড়ি লাগলে টার্মিনাল থেকে নেওয়া হয়। জাবালে নূরের দুইটি ও সুপ্রভাতের একটি গাড়ির রুট পারমিট ও নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। বাকি বাসগুলো আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। বিআরটিএতে সব কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। কাগজে গরমিল থাকলে সেগুলোরও রুট পারমিট বাতিল করা হবে। যেগুলোর কাগজপত্র ঠিক থাকবে, সেসব গাড়ি অচিরেই চালুর ব্যবস্থা করা হবে।’
ছাত্রদের অনুরোধ জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘সড়ক অবরোধ করে কোটি কোটি মানুষের দুর্ভোগ তৈরি করবেন না। দায়িত্বশীল আচরণ করুন। আপনারা ক্লাসে ফিরে যান। আমাদের কাজ করতে সহযোগিতা করুন। চালক ও গাড়ি আটক হয়েছে। গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেহেতু জেব্রা ক্রসিংয়ে মানুষ মেরেছে, তাই চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে।’
এর আগে পরিবহন মালিক নেতারা বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ পরিবহন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘আমাদের গাড়িগুলো কাউন্টারে চলতো। বিএনপি সরকারের সময় সাদেক হোসেন টিকিট কাউন্টারগুলো তুলে নেন। এরপর আমরা ছাতা নিয়ে বসি। সেখানে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার কারণে কাউন্টারের আগ্রহ কমে যায় এবং চুক্তিভিত্তিক বাস চলাচল শুরু হয়।’
তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছে কাউন্টারের জন্য জায়গা চেয়ে বলেন, ‘আমরা কাউন্টারের মাধ্যমে বাস চালাতে চাই। আপনারা কাউন্টারের জায়গা দিয়ে ব্যবস্থা করে দেন।’
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালক এককভাবে দায়ী নয়। বুয়েটের সমীক্ষা অনুযায়ী, ঢাকায় ৮-৯ কিলোমটার গতিতে গাড়ি চলে, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কি করে ঘটে। ছাত্র আন্দোলনের পর আমরা একমাস রাস্তায় থেকে পর্যবেক্ষণ করেছি। গতকালকেও (বুধবার) আমরা সভা করেছি। সেখানে চুক্তিভিত্তিক বাস চালানো থেকে সরে এসে টিকিটে চলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দৈনিক বা মাসিক ভিত্তিতে চালক-শ্রমিকদের বেতনের ব্যবস্থা করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা কাউন্টারের জন্য জায়গা দিলে আমরা টিকিটে চলবো। প্রয়োজনে ছাতা লাগিয়ে বসে টিকিট চালু করা হবে।’
চুক্তিভিত্তিক বাস চালানো ও চালকদের মাদকাসক্তির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করেন খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।