ফুটওভার ব্রিজ আছে, কিন্তু কেন?





SAZZ0196রাজধানীর শাহবাগ মোড়ের ফুটওভার ব্রিজ। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুর ১২টা। ওভারব্রিজের সিঁড়িতে না উঠে পাশ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন এক পথচারী। ফুটওভার ব্রিজে কেন উঠলেন না জানতে চাইলে তিনি একটু বিরক্তি নিয়েই বললেন, ‘রাস্তাতো খালি।’ তাহলে কেন জেব্রাক্রসিং দিয়ে পার হলেন না? উত্তরে তিনি বললেন, ‘সেটা তো আরও দূরে। আমার কাজ এইতো রাস্তার ওপারের দোকানে।’
সোবহানবাগ মেট্রো শপিংমলের সামনের ফুটওভার ব্রিজ। সন্ধ্যা ৬টা। ফুটওভার ব্রিজের ওপর আড্ডা দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। নিচ দিয়ে অবাধে রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা। কারোর কানে হেডফোন, কারোর কোলে শিশুসন্তান। এই পথচারীদের কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে দায় কার? নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনকারী এই শিক্ষার্থীরা বললেন, জনগণকে সচেতন করতে হবে। রাস্তা দিয়ে পারাপার কেবল গাড়ি থামলেই করতে পারবে, এটা শেখানোর কাজটি করতে হবে।
444ব্যস্ততম সড়ক কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ। বাংলামোটর সিগন্যালে গাড়িকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিয়ে রাস্তা পার হয়ে ইস্কাটনের দিকে হাঁটা দিলেন এক ব্যক্তি। কেন এভাবে গাড়ি থামালেন, গাড়ি আপনার হাত দেখে থামতে বাধ্য কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার কোমরে ব্যথা, সিঁড়িতে ওঠা নিষেধ। এখানে গাড়ি থামবে এবং রাস্তা পার হবো, প্রায় ১৫ মিনিটের ধাক্কা। তাই নিরুপায় হয়ে পার হয়ে গেলাম।’
রাজধানীতে পথচারীদের জন্য বানানো ফুটওভার ব্রিজগুলো প্রায় অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে। রাস্তা দিয়ে এলোমেলোভাবে পার হচ্ছেন পথচারীরা। এরপরও কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে সেই জায়গায় ফুটওভার ব্রিজ বানিয়ে দেওয়া যেন অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ আবরার আহমেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রগতি সরণিতে একটি ফুটওভার ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, অব্যবহৃত থেকে যাওয়ার পরও একের পর এক ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ কেন?
নগরপরিকল্পনাবিদরা বলছেন, পৃথিবীর কোনও আধুনিক নগরে ফুটওভার ব্রিজ বানানোয় উৎসাহিত করা হয় না। পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য সমতল সবচেয়ে ভালো উপায়। সেহেতু জেব্রাক্রসিং যেন ঠিকমতো ব্যবহার হয়, সেদিকে নজর দিয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে।
SAZZ0149পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করলেও কেন বারবার তা বানানো হচ্ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করেন, আবার করেনও না। যেসব জায়গায় দেওয়া হয়, সেখানে পারাপারটা নিরাপদ করতেই দেওয়া হয়। তারপরও নিচ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, কারণ সচেতনতার অভাব আছে।’
জেব্রাক্রসিং ব্যবহারে উৎসাহিত করতে পারলে কাজের হতো মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নগর পরিকল্পনায় ফুটওভার ব্রিজ কম উৎসাহিত করা হয়। মনে রাখতে হবে আমরা অন্যদের কপি করে আমাদের সিটি তৈরি করতে পারবো না। আমাদের মতো করেই আমাদের ভাবতে হবে। অন্য সিটিতে ফুটওভার ব্রিজ নেই, আছে আন্ডারপাস আর জেব্রাক্রসিং। আমাদেরও সেদিকে যেতে হবে।’
কেউ দুর্ঘটনায় মারা গেলে দুর্ঘটনাস্থলে ফুটওভার ব্রিজ বানিয়ে দেওয়া সমাধান কিনা, জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোথায় কোথায় ফুটওভার ব্রিজ হবে তার পরিকল্পনা আছে, তার বাইরে কিছু হচ্ছে না। এখন ফুটওভার ব্রিজ করে দিলেই হবে না, সেটা যেন মানুষ ব্যবহার করে সেজন্য জনসচেতনা তৈরি করতে হবে।’
222আগামী মাস থেকে নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ে স্কুলপর্যায় থেকে ক্যাম্পেইন শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, এমন তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গাড়িচালকদেরও সতর্ক করে তোলার কাজ করতে হবে। জেব্রাক্রসিং কেন, কীভাবে, কারা ব্যবহার করেন তারা যেন সেটা জানেন, তারা যেন বেপরোয়া না হন, সেগুলো ধরে কাজ করার আছে।’ সচেতনতা তৈরির বিকল্প কিছু নেই বলে মত দেন তিনি।
নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করার বিষয়ে বলেন, ‘সকলের সক্ষমতা সমান না। যদি আমাদের সিগন্যাল বাতি সিস্টেমটা ঠিক থাকে এবং গাড়িগুলো সিগন্যালে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় হয়, তাহলে পথচারীদের রাস্তা দিয়ে পার হতে অসুবিধা নেই। কিন্তু গাড়িগুলো জেব্রাক্রসিংয়ের ওপর বা সেটা পার হয়ে এগিয়ে গিয়ে মাঝ বরাবর দাঁড়ায়। সিগন্যাল ছাড়ার আগেই আরও এগোতে থাকে। এসব ঠেকানো না গেলে শৃঙ্খলা ফিরবে না।’ একের পর এক ফুটওভার ব্রিজ বানানো কোনও সমাধান না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন