শিক্ষার্থী সংখ্যায় ঢাবির সবচেয়ে বড় অনুষদ ভবন কলাভবন। এখানে ৩২টি বিষয়ে স্নাতক, স্নাতোকত্তর ও বেশ কয়েকটি বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্সের ক্লাস হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী মিলিয়ে দৈনিক এখানে কয়েক হাজার মানুষের আসা-যাওয়া।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ৬ তলা বিশিষ্ট কলাভবনে প্রায় ৭০-৮০টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা আছে। এগুলোর কোনোটিরও মেয়াদ নেই। গত বছরের জুনে এগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর ৯ মাস পার হলেও তা পরিবর্তন করা হচ্ছে না।
আগুন লাগলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা নেই কলাভবনের কেয়ার টেকারদের। ভবনে উপস্থিত কর্মচারীদের এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বিষয়টি বলতে পারেননি।
এ বিষয়ে কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আবু দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মেয়াদউত্তীর্ণ সিলিন্ডার আপাতত পরিবর্তনের দরকার নেই। এগুলো লাগানোর সময় আমরা ফায়ার ব্রিগেড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, সিলিন্ডারগুলো দুই থেকে আড়াই বছর যাবে। তাই মেয়াদ পার হলেও এগুলো পরিবর্তনের কোনও প্রয়োজন নেই। আর আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে আপাতত ভাবছি না। পলাশী বাজারের কাছেই ফায়ার সার্ভিস ইউনিট আছে। আগুন লাগলে তারা দ্রুত গতিতে এখানে পৌঁছাতে পারবে। এর আগেও এরকম দেখেছি। তাই আগুনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করি।’
অনুষদের সান্ধ্যকালীন বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুনসহ যেকোনও দুর্ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ কখনও এ বিষয়গুলো আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আগুন নেভানোর জন্য যে স্প্রেগুলো (বোতল) রাখা হয়েছে তার মেয়াদের কাগজ ছেড়াও দেখেছি। এ হাস্যকর কাণ্ড।’
আগুনের মতো গুরুতর বিষয়টির অবহেলা নিয়ে ক্ষুব্ধ আরেক ছাত্র সামিউল বলেন, ‘মেয়াদ আছে কিনা, তা জানি না। কিন্তু মেয়াদ থাকলেও আমাদের উদ্ধার প্রক্রিয়া বা ব্যবহারটা কেমন হবে তা আমরা জানি না। দুই বছরের বেশি সময় ধরে এখানে পড়াশোনা করছি, কিন্তু কখনও প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করা হয়নি।’
রাজিন নামের এক ছাত্র পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘এমন মহড়া বিশ্ববিদ্যালয় কখনও করেছে নাকি? আমি কখনও দেখিনি বা অংশও নেইনি। আসলে দুর্ঘটনার সময় হয়তো অনেকে এগুলো নিয়ে চিন্তা করে, কিন্তু বাস্তবে তা কখনই হয় না।’
যদি আগুন লাগে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা কতটুকু প্রস্তুত, এছাড়া কোনও প্রস্তুতিমূলক মহড়া হয় কিনা, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র বা কেন্দ্রীয় কোনও আগুন প্রতিরোধ ইউনিট আছে কিনা- এমন বিষয়ে প্রোক্টর বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্প ফায়ার হয়। তবে কতদিন পর হয় এটা জানা নেই। এগুলো করতে আমাদের বিএনসিসি, রোভার স্কাউট টিম আছে। প্রত্যেকটিরই তিনটি করে বাহিনী আছে। তারা ক্যাম্প ফায়ার করে। প্রায় ৬০০ সদস্য এখানে কাজ করে। তবে এটা ঠিক প্রয়োজনের তুলনায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় কাভার করার মতো সংখ্যা নয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে মহড়া হয়নি এটাও ঠিক। এগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’
মেয়াদউত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডারের বিষয়টিতে সুনির্দিষ্ট করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘মেয়াদউত্তীর্ণ সিলিন্ডার বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করবে না, এটা ঠিক। কিন্তু এটা দিয়ে আদতে কোনও কাজই হবে না। হয়তো দেখা যাবে সিলিন্ডারে যে প্রেশার দরকার তা নেই বা তা ফেটে যাবে। সুতরাং যেটুকু বাঁচার সুযোগ থাকে, এগুলোর মেয়াদ না থাকলে তাও সম্ভব নয়। বরং এগুলোতে কালক্ষেপণ ও ঝুঁকি বেড়ে যাবে।’