ব্যবসায়ীদের চাল রফতানির প্রস্তাব খতিয়ে দেখবে সরকার

চালের ব্যবসা

সরকারকে চাল রফতানির প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এই মুহূর্তে দেশে যথেষ্ট পরিমাণে উদ্বৃত্ত চাল রয়েছে। রফতানি করার সুযোগ না দিলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই যুক্তিতে তারা দেড় থেকে দুই লাখ টন চাল রফতানির অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। আর সরকার থেকে বলা হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসে এ সংক্রান্ত একটি লিখিত প্রস্তাব জমা দেয় চাল ব্যবসায়ীদের সংগঠন-বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কৃষকের স্বার্থে চাল রফতানির অনুমতি চেয়েছি। দেশে গত দুই বছর চালের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি, এবারও বাম্পার উৎপাদন হবে। আমাদের চাহিদা সাড়ে তিন কোটি টনের কমবেশি। কাজেই বাড়তি ৫০ লাখ টন চালের মধ্যে মাত্র দুই লাখ টন চাল রফতানির অনুমতি চেয়েছি।’

লায়েক আলী জানান, ২৫ এপ্রিল থেকে এই মৌসুমের চাল সংগ্রহ শুরু হচ্ছে। সরকার এ বছর ৩৬ টাকা কেজিদরে চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাজেই গুদাম খালি করতে না পারলে কৃষকের কাছ থেকে চাল কিনে রাখবো কোথায়? পুরান চালে গুদাম ভর্তি থাকলে কৃষক ও সরকার উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত দুই বছর দেশে বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এবারো দেশে ফসলের বাম্পার ফলন হবে। এগুলো সবই সুসংবাদ হলেও একইসঙ্গে ঝুঁকিও রয়েছে। কোনও কারণে দেশের চাল উৎপাদনকারী যেকোনও একটি এলাকায় বছরের একটি ফসল নষ্ট হয়ে গেলে চাহিদার ভাণ্ডারে আঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। ২০১৭ সালে দেশের হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যার কারণে চাল সংকটের বিষয়টি এখনও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে। পাশাপাশি দেশে এই মুহূর্তে কক্সবাজার এলাকায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। কাজেই চাল রফতানির মতো এই ঝুঁকি নেওয়ার সময় সরকারের এখনও আসেনি। এছাড়া কৃষকের কথা বলা হলেও এই মুহূর্তে কৃষকের গোলায় কোনও চাল নাই। চাল রয়েছে আড়ৎদারদের গুদামে। এই গুদাম খালি করতেই ব্যবসায়ীরা রফতানির অনুমতি চেয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা বাড়তি মুনাফা করতে চাচ্ছেন। এতে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উল্লেখ্য, কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ৩৬ টাকা কেজিদরে বোরো চাল ও ২৬ টাকা কেজি দরে বোরো ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি এই ধান, চাল ও গম কেনা হবে। মার্চে অনুষ্ঠিত খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

চাল

এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, এবছর সাড়ে ১২ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। তবে গোডাউনে ক্যাপাসিটি থাকলে এর পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে তা আগস্ট পর্যন্ত চলবে।

ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া চাল রফতানির প্রস্তাব সম্পর্কে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, চাল ব্যবসায়ীদের সংগঠন-বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন চাল রফতানির প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের দাবি এই মুহূর্তে বাংলাদেশে চাহিদার অতিরিক্ত চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে। রফতানি করা না গেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এই মুহূর্তে চাল রফতানির অনুমতি প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

তাদের এমন প্রস্তাবের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাদের দাবিগুলো শুনেছি। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো। কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানবো, আসলেই চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে কিনা। তারা যে তথ্য দিয়েছে, তা ঠিক কিনা। তারপরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবো।’

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে গত অর্থবছরে চালের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৮৬ লাখ টন। গতিশীলতার এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে ২০৫০ সালে চালের উৎপাদন হবে ৪ কোটি ৭২ লাখ টন। বিপরীতে ২০৫০ সালে ২১ কোটি ৫৪ লাখ লোকের খাদ্য চাহিদা পূরণে ৪ কোটি ৪৬ লাখ টন চালের প্রয়োজন হবে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, উৎপাদন ও লক্ষ্যমাত্রার হিসাব থাকলেও প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বার্ষিক কত টন চালের প্রয়োজন তার কোনও পরিসংখ্যান বা তথ্য সরকারি কোনও দফতরে নেই। কৃষি বিভাগের কাছ থেকে খাদ্যশস্যের বিভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে থাকে খাদ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু চালের গুদাম, মজুত, আমদানি ও উৎপাদন তথ্য থাকলেও চাহিদা বা কতটুকু চাল ভোগ করা হয়, তার কোনও তথ্য সরকারের কোনও মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই।