আরও একটি স্প্যান বসছে পদ্মা সেতুতে, দৃশ্যমান হচ্ছে ১ হাজার ৬৫০ মিটার

পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে বসছে আরও একটি স্প্যান

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ। সোয়া ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুতে ব্যবহারের জন্য মোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বসছে এ সেতুর ১০ম স্প্যান। এক মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুতে দুটি স্প্যান বসানোর ঘটনা এবারই প্রথম। এর আগে চলতি মাসের ১০ তারিখ নবম স্প্যানটি বসানো হয়েছিলো মাওয়া প্রান্তে। নতুন স্প্যানটি কাল মঙ্গলবার বসানো হবে আবারও জাজিরা প্রান্তে। জাজিরা প্রান্তে আগে দৃশ্যমান হওয়া ৮টি স্প্যানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন এই স্প্যান। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ১ হাজার ৬৫০ মিটার দৃশ্যমান হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্প অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অবশ্য, ৩ ও ৪ নম্বর পিলারের ওপরে আরও একটি স্প্যান অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। ইয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অস্থায়ীভাবে রাখা এই স্প্যানটি পরে ৫ ও ৬ নম্বর পিলারের ওপর সরিয়ে নেওয়া হবে।

পদ্মা সেতুর সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৬-সি স্প্যানটি জাজিরা প্রান্তের পিলার এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। 

তিনি জানান,এর আগে ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান বসানো হয়েছে। এবারের স্প্যানটি ৩৪ ও ৩৩ নম্বর পিলারের সঙ্গে জোড়া লাগিয়ে বসানো হবে।  স্প্যানটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার আর ওজন তিন হাজার ১৪০ টন। তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ক্রেন তিয়ান-ই স্প্যানটি বহন করে আনে।

তিনি জানান, কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় একটি স্প্যান ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর রাখা আছে। এটি আসলে বসবে ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের ওপর। ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের কাজ সম্পূর্ণ হলে এ স্প্যানটি সরিয়ে নেওয়া হবে।

পদ্মাসেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমাদের টার্গেট কালকেই (বুধবার) আমরা আরেকটি স্প্যান বসাতে চাই। তবে বিষয়টি অত্যন্ত টেকনিক্যাল, বসানোর বিষয়টিতে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় আছে। সময়ও লাগতে পারে। তবে পদ্মা সেতু  নিয়ে মানুষ আশাবাদী হচ্ছে এটাই আমাদের পাওয়া।

তিনি জানিয়েছেন, নদীর তলদেশে মাটির স্তরের গঠন নিয়ে জটিলতা কাটিয়ে বর্ষায় নদীর প্রবল স্রোতকে উপেক্ষা করে চলছে এ নির্মাণযজ্ঞ। এসব প্রতিকূলতা জয় করে মূল সেতুর পাইলিংয়ের কাজ চলছে পদ্মার দুই পাড়ে। এক সেকেন্ডের জন্যও বন্ধ রাখা হয়নি এ সেতুর নির্মাণ কাজ। জাজিরা অংশে সব পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শেষ। মাওয়া পয়েন্টের ১৭টি পিলারের ডিজাইনের কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে আরও জানান, পদ্মা সেতুর রঙ হবে সোনালী। তবে রাতে সেতুটিতে জ্বলবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে লাল ও সবুজ বাতি। সেভাবেই সেট করা হবে বাতি। পদ্মা নদীর পানির স্তর থেকে ৫০ ফুঁট উচুতে বসবে প্রতিটি স্প্যান। কাজের গতি বাড়াতে সিঙ্গাপুর থেকে আরও ২টি হাইড্রোলিক হ্যামার আনা হয়েছে। এসেছে নতুন পারদর্শী শ্রমিক এবং নতুন দক্ষ প্রকৌশলী। মূল নদীর মধ্যে ১৫০ মিটার পর পর ৪২টি পিলারের প্রতিটি পিলারে ৬টি করে মোট ২৫২টি পাইল থাকছে।  

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ তদারকিতে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল।

সরকারের নীতি নির্ধারকরা জানিয়েছেন, এই মূহুর্তে সরকারের লক্ষ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া। পদ্মা সেতু প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এমন কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা নদীগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পদ্মা অন্যতম। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু প্রকল্প অংশে পদ্মা আরও তীব্র খরস্রোতা। 

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় সেতুর প্রথম স্প্যান। এর প্রায় ৪ মাস পর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। ১১ মার্চ জাজিরা প্রান্তে তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। এরপর এক মাস ১৬ দিনের মাথায় পঞ্চম স্প্যানটি বসে ২৯ জুন। ৬ মাস ২৫ দিন পর এ বছরের ২৩ জানুয়ারি বসে ষষ্ঠ স্প্যানটি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারে বসে জাজিরা প্রান্তের সপ্তম স্প্যান। ২২ মার্চ বসে অষ্টম স্প্যান এবং মাওয়া প্রান্তে গত ১০ এপ্রিল বসে নবম স্প্যান। তবে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর অস্থায়ীভাবে একটি স্প্যান রাখা হয়েছে। এই অস্থায়ী স্প্যানটি বাদে এ যাবত পদ্মা সেতুতে মোট ৯টি স্প্যান বসানো হয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান।