৫০০ কোটি টাকার চিনি গুদামে কেন, প্রশ্ন সংসদীয় কমিটির

চিনি (ছবি সংগৃহীত)অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে চিনি কিনে গুদামে ফেলে রাখার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। বুধবার (১৫ মে) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঋণ নিয়ে এই চিনি কিনেছিল।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কেন চিনি কেনা হলো? সেই চিনি এখনও কেন গুদামে? মিলের উৎপাদিত চিনি বিক্রি হয় না। অথচ দেশের বাইরে থেকে চিনি কিনে গুদামে ফেলে রাখা হয়েছে। কার স্বার্থে? এসব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি করপোরেশন বা মন্ত্রণালয়। কমিটি এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী বৈঠকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।’

এদিকে বৈঠকে আখ চাষীদের বকেয়া প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ঈদের আগেই পরিশোধ করার জন্য চিনি শিল্প করপোরেশনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছে সংসদীয় কমিটি।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছর পর্যন্ত আখ চাষীরা করপোরেশনের কাছে ১১৯ কোটি টাকা পাবে। এর বাইরে বীজ সরবরাহকারীরা পাবে প্রায় ৩১ কোটি টাকা।

এদিকে বেসরকারি চিনি কারখানার মালিকরা নিয়ম ভঙ্গ করছেন বলে বৈঠকে আলোচনা হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিদেশ থেকে আমদানি করা অপরিশোধিত চিনির ৫০ ভাগ দেশের বাইরে বিক্রি করছে না বলে বৈঠকে জানানো হয়। এতে করে দেশীয় মিলে উৎপাদিত চিনি বিক্রি হয় না বলে কমিটির আলোচনায় উঠে আসে।

এ বিষয়ে কমিটি বলছে, বেসরকারি চিনি কলগুলো যদি নিয়ম ভাঙে তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এছাড়া বৈঠকে কমিটি কাটার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আখ মাড়াইয়ের সুপারিশ করেছে। এছাড়া ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রটি কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফিরিয়ে আনা যায় কী না তা নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনার পরামর্শ দেওয়া হয়।

কেরুর লাভ বাড়ছে: বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীন কেরু অ্যান্ড কোং মিল ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং রেনউইক, যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোং মিল এক কোটি ৬ লাখ টাকা লাভ করেছে। করপোরেশনের অধীন বাকি ১৪টি প্রতিষ্ঠানই লোকসানে চলছে।

কার্যপত্রে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থ বছরের লাভ ছিল ২২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যা কমে দাঁড়ায় চার কোটি ১৪ লাখ, ২০১৫-১৬ তে তিন কোটি ৮০ লাখ, ২০১৬-১৭ তে চার কোটি ৮১ লাখ।

কমিটির সভাপতি জানান, চিনি কলগুলোর আয় বাড়াতে প্রত্যেকটি চিনি কলকে ‘বাই প্রডাক্টের’ উৎপাদনে নজর দিতে বলা হয়েছে। সেটা কেরুর মতো পণ্য বা বিদ্যুৎ যেকোনোটাই হতে পারে।

আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, ইসমাত আরা সাদেক, নারায়ন চন্দ্র চন্দ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, মির্জা আজম, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মো. জিল্লুল হাকিম, মুহিবুর রহমান মানিক অংশ নেন। বিশেষ আমন্ত্রণে সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান বৈঠকে যোগ দেন।