নদী ‘জীবন্ত সত্তা’: রায়ের কপি যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে





নদী (ছবি: ফোকাস বাংলা)নদ-নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়া উচ্চ আদালতের রায়ের কপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার অফিস। সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে হাতে হাতে রায়ের কপি পৌঁছে দেওয়া হবে। না হয় প্রতিনিধির কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এছাড়া, রায়ে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কিছু জায়গায় কপি পাঠানোর পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি তুরাগ নদকে ‘জীবন্ত সত্তা’ বা ‘লিগ্যাল পারসন’ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়টির পূর্ণাঙ্গ কপি ১ জুলাই প্রকাশিত হলে তাতে দেখা যায়, ‘জীবন্ত সত্তা’র এই ঘোষণা দেশের সব নদ-নদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্যের কথা বলা হয়েছে। রায় ঘোষণাকালে আদালত বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবী বলছেন, নদ-নদীও এখন থেকে মানুষের মতোই ‘জীবন্ত সত্তা’হিসেবে সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করবে। সেক্ষেত্রে নির্বাহী অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় থাকতে পারে। জনস্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রায় সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টিতে আনার রেওয়াজ আছে।

রায়ের কপি পাঠানোর প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. জাকির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার আমরা সার্টিফায়েড কপি তোলার ব্যবস্থা করবো। এরপর সেটি থেকে বই বানানো হবে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে সময় চাওয়া হবে। এ ধরনের রায় পাঠানোর বিষয়টি অহরহ ঘটে, এমন নয়। এটি রেয়ার কেস। সে কারণে আমরা হাতে হাতে দিতে আগ্রহী। আর যদি প্রধানমন্ত্রী সময় দিতে না পারেন, সেক্ষেত্রে প্রতিনিধিদের কাছে দেওয়া হবে। এছাড়া, আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে এর কপি পাঠানোর কথা বলা আছে। হাজার হাজার কপি বই বানানো ব্যয়সাপেক্ষ। ফলে আমরা অনেককেই ই-মেইল করার কথা ভাবছি এবং মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বই বানিয়ে পাঠানো হবে। তবে, তা বাজেট পাওয়ার পরে।’

মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘এটির সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ করে তারপর অফিস থেকেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। আদালত ১৭টি নির্দেশনা দিয়েছেন। এর বেশিরভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে নানারকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় আছে। ফলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই রায়টি জানানোর কথা বলা হয়েছে। তারা যেন প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন। এখন থেকে নদীর একটি আইনি ভিত্তি তৈরি হলো। নদী ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা আবারও আদালতের দ্বারস্থ হলে সংশ্লিষ্টরা যেন রায়ের বিষয়টি জানেন না, এমন কোনও কথা না বলতে পারেন। সে কারণে রায়ের কপি পাঠিয়ে দিতে বলা হয়েছে।’

নদী ‘জীবন্ত সত্তা’ বলতে কী বোঝায়, এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আদালতের ঘোষণা অনুযায়ী তুরাগসহ নদ-নদীগুলো মানুষ বা প্রাণী যেমন কিছু আইনি অধিকার পায়, সেসব অধিকার দাবি করতে পারবে। নদী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মনে করলে প্রতিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যাবে। রায়ের মধ্য দিয়ে নদীর সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত হওয়ায় নদী কিছু আইনি অধিকার পাবে। সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সেসব পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্টরা প্রস্তুত করবেন।’

এর আগে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ে বলা হয়েছে, ‘ঢাকার আশপাশের চারটি নদী রক্ষায় আদালত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিলেও সেসব রায়ের নির্দেশনাগুলো সঠিক বাস্তবায়নে বিবাদীরা কোনও পদক্ষেপ নেননি। ওই সময় যদি পদক্ষেপ নেওয়া হতো, তুরাগ রক্ষায় হাইকোর্টে আরেকটি মামলা করার প্রয়োজন হতো না। রায়ে বলা হয়, অবৈধ দখলদারদের দ্বারা প্রতিনিয়তই কমবেশি নদী দখল হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করায় নদী সংকুচিত হয়ে পড়ছে।’ এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তুরাগকে লিগ্যাল পারসন হিসেবে ঘোষণা করেন আদালত।