কমিশনার মাহবুব তালুকদারের অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওইদিন (২৭ জুন) রিজেন্ট এয়ারের ফ্লাইটটির নম্বর ছিল আরএক্স ০৭৮৬। বিজনেস ক্লাসে তার ও তার স্ত্রীর আসন নম্বর ছিল ১–এ ও ২–ডি। দু‘জনেরই বোর্ডিং পাসে ভিআইপি সিল মারা ছিল। বিমানে ওঠার আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে মাহবুব তালুকদার ওই ফ্লাইটের যাত্রী পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী ও তার স্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তবে, আইজিপি যে ওই একই ফ্লাইটের যাত্রী তা আগে জানতেন না উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, আমরা যে একই ফ্লাইটে চট্টগ্রাম যাচ্ছি তা আগে বুঝতে পারিনি। প্লেন রানওয়েতে রাখা ছিল বলে আইজিপিকে গাড়িতে করে আগেই নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের তোলা হয় সবার পরে। গিয়ে দেখি বিজনেস ক্লাসের কোনও আসন খালি নেই। আমাদের আসনে বসে আছেন আইজিপি ও তার স্ত্রী। আমাকে ও আমার স্ত্রীকে ইকোনমি ক্লাসের আসনে বসানো হয়। এই অনিয়মের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কর্তব্যরত এয়ার হোস্টেস কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
পরে চিফ পার্সারকে ডেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, গ্রাউন্ড স্টাফরা ভুল করে আমাদের ইকোনমি ক্লাসে বসিয়েছে। আমি তখন বলি, তাহলে আমাদের টিকিট অনুযায়ী উপযুক্ত স্থানে বসানো হোক। এ কথারও কোনও উত্তর তাদের ছিল না। এ সময় প্লেন থেকে তারা নেমে যেতে চেয়েছিলেন বলে মাহবুব তালুকদার অভিযোগে উল্লেখ করেন। তবে ততক্ষণে বিমানের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে তারা ইকোনমি ক্লাসে বসে চট্টগ্রামে যেতে বাধ্য হন।
আইজিপি ও তার স্ত্রীর টিকিট ইকোনমি ক্লাসের ছিল এমনটা জানতে পেরেছেন বলে সিইসিতে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করেছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
অভিযোগে তিনি বলেন, বিমান চলাকালে এয়ার হোস্টেসকে ডেকে লিখিত অভিযোগ করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। এতে এয়ার হোস্টেস একটি মূল্যায়ন ফরম এনে দিয়ে বলেন, ‘স্যার সাদা কাগজ তো নেই। আপনি ফরমে অভিযোগ লিখে দিতে পারেন।’
মাহবুব তালুকদার ফরমটি এয়ার হোস্টেসকে ফেরত দিয়ে বলেন, ‘আমার অভিযোগ এই ফরমে লেখার উপযুক্ত নয়।’ পরে বিমানে পাইলটকে ঘটনাটি জানান এ নির্বাচন কমিশনার। পাইলট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর আশ্বাস দেন।
গত ২ জুলাই সিইসিতে দেওয়া ইউনোটে মাহবুব তালুকদার বলেন, এ ঘটনায় শুধু একজন নির্বাচন কমিশনারের সম্মানহানি হয়নি। বিষয়টি সামগ্রিকভাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও কমিশনারদের জন্য অবমাননাকর। তিনি এ বিষয়ে রিজেন্ট এয়ারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিইসিকে অনুরোধ করেছেন।
জানতে চাইলে মাহবুব তালুকদার এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কেবল নির্বাচন কমিশনার কেন, কোনও যাত্রীর সঙ্গেই এ ধরনের ঘটনা ঘটা উচিত নয়। এ ধরনের ঘটনা সব যাত্রীর জন্য সম্মান হানিকর। আমরা এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে নোটিশ করতে চাই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইসি সচিবালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে ইসির আইন শাখা থেকে জানা যায়, গত রবিবার ইসি সচিবালয় থেকে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইসির প্যানেলভুক্ত আইনজীবীদের মধ্য থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজের চিফ অপারেটিং অফিসার আশিষ রায় চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা ঘটনাটি জেনেছি। বিষয়টিকে অত্যন্ত সিরিয়াসলি নিয়েছি। রিজেন্ট এয়ার কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখিত। আমরা এ ঘটনা তদন্ত করছি। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, মাননীয় নির্বাচন কমিশনারের কাছে ক্ষমা চাইতে তাদের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার হানিফ জাকারিয়া নির্বাচন কমিশনে যাবেন।
এ বিষয়ে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার হানিফ জাকারিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের পরিচালক (প্রশাসন) বিষয়টি তদন্ত করেছেন। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাহেবের সঙ্গে খুব শিগগির আমরা দেখা করবো। এটি আসলে একেবারেই আমাদেরই ভুল। আমরা খুবই দুঃখিত।
তিনি বলেন, আমরা কমিশনার সাহেবকে জানাবো এ ঘটনায় আমরা কী অ্যাকশন নিয়েছি। এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাও তাকে অবহিত করবো আমরা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের জন সংযোগ বিভাগের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ‘এটি রিজেন্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনার বিষয়। কে কোন আসনে বসবেন, তা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষই নির্ধারণ করে। এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করে দেওয়া আসনে বসেই আইজিপি ভ্রমণ করেছেন।‘