বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ধান কেনা কম, চাল বেশি

ধান-চাল

চলতি বোরো মৌসুমে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে সরকার। অন্যদিকে চাল কেনার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। চার লাখ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ জুলাই পর্যন্ত কেনা হয়েছে মাত্র ৮৪ হাজার ৩০৯ মেট্রিক টন। আর ১০ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও দেড় লাখ মেট্রিক টন আতপসহ মোট সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কেনা হয়েছে ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৪৮৬ মেট্রিক টন। এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন লাখ ১৬ হাজার ৪৮৬ মেট্রিক টন বেশি চাল কেনা হয়েছে। সোমবার (৮ জুলাই) জাতীয় সংসদের প্রশ্ন-উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের এবাদুল করিমের প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এ তথ্য জানান।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়।

খাদ্যমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী ধান, চাল ও গমে সাড়ে ১৩ লাখ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মোট কেনা হয়েছে ১৫ লাখ ৯০ হাজার ৯৭০ মেট্রিক টন। গম কেনার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে দেড় লাখ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কেনা হয়েছ ৪০ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন।

এক সম্পূরক প্রশ্নে খাদ্যমন্ত্রী ধান কেনার জন্য সংসদ সদস্যদের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল কিনতে পারলেও ধান এখনও কিনতে পারিনি। ৪ লাখ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আমরা এক লাখ টন কিনতে পেরেছি। ধান কেনার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেছেন। সংসদ সদস্যদের বলবো, এ বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে। তাহলে আমরা ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবো।’

এদিকে, গত ২০ জুন সংসদে খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ২৫ এপ্রিল থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন ধান, চার লাখ ২৩ হাজার ৫৩২ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ৩৬ হাজার ৩০৬ মেট্রিক টন আতপ চাল ও ২৩ হাজার ৬১২ মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ এপ্রিল থেকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত খাদ্যশস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে।

বগুড়া-৭ আসনের রেজাউল করিম বাবলুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সাধন চন্দ্র বলেন, ‘আগেও ধান-চাল কেনা হয়েছে কিন্তু এবারের মতো সুষ্ঠুভাবে ধান ক্রয় করা হয়নি। এবার নির্বহী অফিসার, ডিসি সাহেব, এসপি সাহেবরা কৃষকের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ধান কিনেছেন। কোনও সিন্ডিকেট এবার স্থান পায়নি। আমি জোর গলায় বলতে পারি, কোনও দলীয় প্রভাব স্থান পায়নি। কোনও দলীয় প্রভাব এবার পড়েনি। বরং দলীয় নেতাকর্মীরা সহযোগিতা করেছে। কোনও সিন্ডিকেট এবার নেই।’

সংসদ সদস্যরা খাদ্যশস্য ক্রয় কমিটির উপদেষ্টা উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সদস্যদের অনুরোধ করবো। আপনাদের এলাকার ধান এখনও কেনা হয়নি। অনেক ধান পড়ে আছে। অনেক বরাদ্দ পড়ে আছে। আপনারা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে ধানগুলো গোডাউনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তাহলে কৃষকেরা অনেকখানি লাভবান হবেন।’

এর আগে সংসদ সদস্য বাবলু তার সম্পূরক প্রশ্নে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে ধানসংগ্রহ একটি সিন্ডিকেটের আওতায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সাধারণ কৃষকেরা সরাসরি খাদ্যগুদামে ধান দিতে পারছেন না। এক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি কোনও পরামর্শ বা নির্দেশনা রয়েছে কিনা?’

সরকারি দলের পনির উদ্দীনের সম্পূরকের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ধান না দেওয়ার কোনও কারণ নেই। এখন পর্যন্ত এক লাখ টন ধানও কেনা হয়নি। মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ করছেন। অনেকে বলেন, সরকারি গুদামে ধান দিতে যাতায়াত খরচ বেশি পড়ে। এখন প্রায় সব রাস্তা পাকা। কৃষকেরা সরাসরি সরকারের কাছে ধান বিক্রি করলে বাজারের চেয়ে ২০০ টাকা বেশি পান। যদি কোনও এলাকায় জায়গা না থাকে, তা জানালে জায়গা করে দেওয়া হবে।’

সংরক্ষিত আসনের সৈয়দা রুবিনা আক্তারের প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী জানান, ‘দেশের সরকারি খাদ্য গুদামের ধারণক্ষমতা ২১ লাখ ৫ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন।’

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক জানতে চান চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ বাড়তি সুযোগ নিতে পারছে কিনা? জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বাংলাদেশ রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। রফতানির পরিমাণ বাড়ছে।’ তবে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য কোনও প্রভাব দেখা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।