গত ৩ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ নগর ভবনে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সমন্বয় সভা শেষে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জানান, ৭ জুলাই থেকে রাজধানীর তিনটি রুটে রিকশা চলাচল করবে না। রুটগুলো হচ্ছে—(১) কুড়িল-রামপুরা-সায়েদাবাদ, (২) গাবতলী-আসাদগেট-আজিমপুর ও (৩) সায়েন্স ল্যাব-শাহবাগ।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ও পরদিন শুক্রবার ডিএনসিসি নিয়ন্ত্রণাধীন প্রগতি সরণিতে রিকশা চলতে দেখা গেছে। মিরপুর রোডে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রিকশা না দেখা গেলেও শুক্রবার অপেক্ষাকৃত ফাঁকা রাস্তায় রিকশা চলাচল করেছে।
এদিকে, রিকশা বন্ধের প্রথম দিন থেকেই আন্দোলন শুরু করেছেন রিকশাচালক ও মালিকরা। তাদের দাবি, প্রধান সড়কগুলোতেও রিকশা চলাচলের অনুমতি দিতে হবে। তবে, সেক্ষেত্রে রিকশার জন্য আলাদা লেন করে দিতে হবে। না হয়, তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। এভাবে রিকশা বন্ধ করে দিলে তাদের উপার্জন কমে যাবে। সাধারণ মানুষও দুর্ভোগে পড়বে।
রিকশাচালকদের আন্দোলনের পর গত ১০ জুলাই ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম নগর ভবনে রিকশাচালক ও মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি বিষয়টি নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রথমে বলেন ‘প্রগতি সরণিতে কোনও রিকশা চলবে না।’ আবার পরে বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে প্রগতি সরণি থেকে রিকশা উঠিয়ে দেওয়া হবে।’
শুক্রবার সকালে খিলগাঁও, মালিবাগ রেলগেট, আবুল হোটেল ও রামপুরা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি রিকশাও চলাচল করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনও বাধা দিচ্ছে না। তবে এদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় যানবাহন অনেক কম ছিল।
রিকশাচালকরা জানান, মেয়রের সঙ্গে বৈঠকের পর মালিক ও নেতারা তাদের জানিয়েছেন রিকশা চলতে কোনও সমস্যা নেই। সে কারণে তারা আন্দোলন তুলে নিয়েছেন। এখন তারা প্রগতি সরণিতে রিকশা চালাচ্ছেন।
জানতে চাইলে শুক্রবার সন্ধ্যায় ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বলেছি পর্যায়ক্রমে রিকশা বন্ধ করতে হবে। হুট করেই বন্ধ করে দিলে হবে না। রিকশাচালকদের সমস্যাও শুনতে হবে। এজন্য বাইলেনগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।’
তাহলে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তটি এসেছে ঢাকা দক্ষিণ থেকে। সেদিন (১০ জুলাই রিকশাচালকদের সঙ্গে তার বৈঠকে) আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওয়ার্ডভিত্তিক অবৈধ রিকশা ও গ্যারেজ শনাক্ত করা হবে। এজন্য কমিটি করে দিচ্ছি। আমরা বৈধ রিকশার পেছনে কিউআর কোর্ড করে দেবো। চালকদেরও ডাটাবেজ করা হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক রিকশাওয়ালাদের বিভিন্ন ড্রেস করে দেবো। অবৈধ রিকশা বন্ধ করবো।’
এদিকে, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন রিকশা বন্ধে তার অনড় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধান সড়কে যানজটের অন্যতম কারণ ধীরগতির যানবাহন রিকশা। পৃথিবীর কোনও শহরে এমন অবস্থা নেই। অবৈধ যানবাহন বন্ধ, ফুটপাত দখলমুক্ত ও অবৈধ পার্কিং বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে গঠিত কমিটি দু’টি প্রধান রুটে রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুরো শহর থেকে রিকশা উঠিয়ে দেওয়া হয়নি। মাত্র ২০-২৫ কিলোমিটার সড়কে বন্ধ করা হয়েছে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সিদ্ধান্ত কার্যকরে ভূমিকা রাখতে হবে।’ তবে, রিকশা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থানের বিষয়ে সাঈদ খোকন স্পষ্ট করে কিছু না জানালেও নগর ভবনের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, কমিটির দায়িত্ব সিদ্ধান্ত নেওয়া। আর সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পুলিশের। এছাড়া সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময়ও ডিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করছে না। তারা দায়িত্ব পালন করলে আন্দোলন বা বন্ধ ঘোষিত সড়কে রিকশা চলতে পারে না।’
জানতে চাইলে রিকশাচলক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রিকশায় একটু জায়গা কম লাগে। আর প্রাইভেট কারে জায়গা বেশি লাগে। সে কারণে ঢাকা শহরে জ্যাম লাগে। আগে ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করা উচিত।’
আরিফ হোসেন নামে একজন বলেন, ‘শহরে গাড়ি যেন সুন্দরভাবে চলে। আমাদের জন্য আলাদা লেন করে দেওয়া হোক। বাসের লেনে বাস চলবে, রিকশার লেনে রিকশা চলবে। লেনমতো চললে কোনও সমস্যা হবে না।’
সামছুদ্দিন নামে আরেক রিকশাচালক বলেন, ‘আমরা চাই রাস্তায় রিকশা যেন চলে। বন্ধ যদি করে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা চলবো কীভাবে? সরকার যদি বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমাদের চলার মতো কোনও ব্যবস্থা নেই।’
জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার প্রবীর কুমার রায় বিষয়টি নিয়ে মেয়রদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।