মন্ত্রিসভায় সাত এজেন্ডা অনুমোদন

মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক (ছবি: ফোকাস বাংলা)জাতীয় স্কুল মিল নীতির খসড়া, প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়াসহ সাতটি এজেন্ডায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত বৈঠকে অনুমোদন পায় এগুলো।

মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

সচিব জানান, এক নম্বর এজেন্ডায় ‘চাঁদুপর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৯’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খসড়া অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন স্থানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আদলেই হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়। রাষ্ট্রপতি হবেন এর চ্যান্সেলর। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই ভিসি, প্রোভিসি ও রেজিস্ট্রার পদ থাকবে। সিন্ডিকেট সদস্য হবেন ১৩ জন। রেজিস্ট্রার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। সিন্ডিকেট সদস্যরা দুই বছরের জন্য মনোনীত হবেন, দুই মাসে একবার সিন্ডিকেট সভা হবে।

মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক (ছবি: ফোকাস বাংলা)

দুই নম্বর এজেন্ডায় ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৯’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটা ১৯৭৬ সালের সামরিক সরকারের অধ্যাদেশ বলে এতদিন পরিচালিত হতো। শুরুতে এর নাম ছিল চালনা সমুদ্রবন্দর। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, সামরিক সরকারের অধ্যাদেশগুলোকে আইনে পরিণত করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এই আইন তৈরি হচ্ছে বলে জানান সচিব।

তিনি আরও জানান, একজন চেয়ারম্যানসহ সাত জনের একটি বোর্ড থাকবে বন্দর পরিচালনার জন্য। আইনের ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, বোর্ড চাইলে সংরক্ষিত বন্দর এলাকা ঘোষণা করতে পারবে। আইনের ১৯ ধারায় বন্দর পরিচালনার জন্য অপারেটর নিয়োগ বিধি সংযোজন করা হয়েছে। আইনের ৪০ ধারায় বলা হয়েছে, আইনের বিধিবিধান কেউ অমান্য করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল বা দুই লাখ টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। জাহাজ থেকে অপসারিত বর্জ্যের (ছাই, তেল ইত্যাদি) কারণে সমুদ্র বা নদীর পানি, পরিবেশ বা জলজ প্রাণীর ক্ষতি হলে সর্বোচ্চ এক বছরের জেল, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।

আইনের বিধান লঙ্ঘন করে কেউ টোল বা মাসুল ফাঁকি দিলে সর্বোচ্চ এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। এই আইনের আওতায় অন্যান্য অপরাধ ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) অনুযায়ী বিচার হবে।

তিন নম্বর এজেন্ডায় ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা আইন, ২০১৮’ এর বিধানাবলি সার্বিকভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তা পুনর্গঠনের লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা গঠিত আগের কমিটি পুনর্গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, এই আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গত সরকারের চার জন প্রকৌশলী মন্ত্রীকে নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তারা যেহেতু নতুন মন্ত্রিসভায় নেই, তাই আগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। তারা হলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গণপূর্ত ও গৃহায়নমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। ইয়াফেস ওসমান এই মন্ত্রিসভায় আছেন, বাকি তিন জন নেই।

চার নম্বর এজেন্ডায় ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সম্পর্কিত সমন্বিত/বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা, ২০১৯’ এবং ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) ব্যতীত প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত/বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা, ২০১৯’ এর খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এই নীতিমালা চূড়ান্ত হলে মূল ধারার স্কুলের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুল চালাতে হবে। যেখানে সেখানে মানহীন স্কুল প্রতিষ্ঠা রোধ করার জন্যই এই নীতিমালা তৈরি করছে সরকার।

পাঁচ নম্বর এজেন্ডা অনুযায়ী, ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি, ২০১৯’-এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। এর আওতায় ২০২৩ সালের মধ্যে সব সরকারি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য দুপুরের খাবার সরবরাহের এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। তবে শুরুতে চর, হাওর ও দুর্গম এলাকার স্কুলগুলোতে এই সুবিধা দেওয়া হবে। এই কর্মসূচির আওতায় তিন থেকে ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের দৈনিক শক্তি চাহিদার ৩০ শতাংশ (ক্যালরি) এই মিল থেকে আসবে এমন খাবার দিতে হবে। বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্কুল মিল বাস্তবায়নের জন্য পরিচালনা কমিটি থাকবে।

ছয় নম্বর এজেন্ডা অনুযায়ী, বাংলাদেশ পাওয়ার ইকুইপমেন্ট ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি লিমিটেড স্থাপনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) এবং চীনের বেসরকারি কোম্পানি শেনজান স্টার ইন্সট্রুমেন্ট কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে একটা জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি হবে এটি। এখানে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার উৎপাদন করা হবে। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন চার কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা।

সাত নম্বর এজেন্ডায় বাংলাদেশ কম্পিটার কাউন্সিলের আওতায় ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড’ শীর্ষক কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এটি হবে সরকারি কোম্পানি। এই কোম্পানি আইসিটি সেক্টরের উদ্যোক্তা তৈরি করবে। এর শেয়ার ক্যাপিটাল হবে ৫০০ কোটি টাকা। প্রতি শেয়ারের পার ভ্যালু ১০ টাকা। ২০০ কোটি টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করা হবে। আইসিটি সেক্টরের উদ্যোক্তা তৈরিতে এই কোম্পানি আর্থিক সহায়তা বা ঋণ দেবে। কোনও কিছু বন্ধক রাখতে হবে না। পরিচালনার জন্য আইসিটি মন্ত্রণালয়ে সচিবের নেতৃত্বে সাত জনের একটি পরিচালনা কমিটি থাকবে।