১৫ ও ২১ আগস্টের নৃশংসতা কূটনীতিকদের সামনে তুলে ধরলো আ. লীগ

কূটনীতিকদের সামনে ১৫ ও ২১ আগস্টের নৃশংসতা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সামনে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নির্মমতা ও নৃশংসতা তুলে ধরেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটি কূটনীতিকদের সামনে ওই দু’দিনের ঘটনা সবিস্তারে তুলে ধরে।

‘বাংলাদেশের ওপর ১৫ আগস্টের প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনার শেষে উপস্থিত কূটনীতিকরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহম্মেদ, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় ওই বাড়িতে উপস্থিত আব্দুর রহমান রমা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এসময় কূটনীতিকরা বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমেও বিস্তারিত তথ্য জেনে নেন।

আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে চলতে না দেওয়ায় আমরা এখনও পিছিয়ে আছি। যদি তার দেখানো পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারতো, তাহলে হয়তো এখন আমরা উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেতাম।’ বঙ্গবন্ধুর কৃষি খাজনা মওকুফ, সংবিধান প্রণয়ন, অবকাঠামো গড়ে তোলাসহ রাষ্ট্রের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রশ্ন-উত্তর পর্বে তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সঙ্গে সরকারের আলোচনার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘আশা করি, এই দু’দেশ খুনিদের ফেরত পাঠাবে।’

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কানাডার ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগের বিষয় স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘সম্প্রতি টেক্সাসের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যে পাঠিয়েছে কানাডা। কেননা, ওয়াশিংটন মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করে না। কিন্তু ওয়াশিংটনে পাঠানোর পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে টেক্সাসে পাঠায়, যেখানে ওই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।’

তিনি আরও  বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনিকে বাংলাদেশে ফেরত আনতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইন ও শাসনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যে নীতি রয়েছে, তাতে আমরা আশাবাদী— এই খুনিকে ফেরত পাঠাবে দেশটি।’

বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরাবঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতক্ষ্যদর্শী আব্দুর রহমান শেখ (রমা) সেদিনের ঘটনা কূটনীতিকদের সামনে সবিস্তারে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘আবদুর রব সেরনিয়াবাতের হত্যাকাণ্ডের খবর পাবার পর বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব আমাকে রাস্তায় পাঠান দেখে আসার জন্য। আমি দোতলা থেকে নেমে দরজা খুলে বাইরে গিয়ে দেখি, আর্মি অফিসাররা গুলি করতে করতে এগিয়ে আসছে। আমি আবারও দৌড়ে ঘরের ভেতর গিয়ে খবরটি বেগম মুজিবকে দিলে, তিনি তার বড় ছেলে ও মেজো ছেলেকে ডেকে আনতে বলেন। আমি তিন তলায় গিয়ে কামাল ভাই ও দোতলা থেকে জামাল ভাইকে ডাকি। এসময় দোতলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন।’ সেদিন কাউকে বাঁচাতে না  পারা, বিশেষ করে শেখ রাসেলকে বাঁচাতে না পারার আক্ষেপ কান্নার মাধ্যমে প্রকাশ করেন রমা। তিনি বলেন, ‘‘আম গাছের নিচে বসিয়ে রাখা শেখ রাসেল যখন কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাসা করছিল, ‘ওরা কি আমাকেও মেরে ফেলবে।’ তখন ১২ বছরের রমা ও বসে থাকা অন্যরা বলেছিল, ‘না, তোমাকে মারবে না।’ কিন্তু একটু পরে আর্মির বড় অফিসার ট্যাংক নিয়ে প্রবেশ করলে ওখানে থাকা এক সৈন্য তাকে গিয়ে বলে, ‘শেখ রাসেল তার মার সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছে।’ উত্তরে সেই আর্মি অফিসার বলেন, ‘আমরা সেই ব্যবস্থা করতে পারি।’ এরপর মায়ের সঙ্গে দেখা করানোর কথা বলে শেখ রাসেলকে ওপরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বেশ কিছু সময় শেখ রাসেলের কান্নার আওয়াজ পাই আমরা। কিছুক্ষণ পর চার-পাঁচটা গুলির শব্দ শুনি। তারপর আর কোনও সাড়া শব্দ পাইনি।’’