ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মালিকানাধীন ধানমন্ডি লেকটি গত ১৮ বছর ধরেই ইজারাবদ্ধ আছে তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। দু’বছর আগে এই ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও ‘বিভিন্ন জটিলতা’র কথা বলে নতুন ইজারার প্রস্তুতি নেয়নি ডিএসসিসি। এদিকে, আগের ইজারার মেয়াদেই এই তিন প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় দুই কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে সরকারের অডিট অধিদফতরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কিন্তু, সে পাওনা আদায়ে এখনও ব্যবস্থা নেয়নি সিটি করপোরেশন। এমনকি এই লেক ইজারা থেকে আগে যে অর্থ আদায় হয়েছে তাও সিটি করপোরেশনের তহবিলে জমা হয়নি এবং এ সংক্রান্ত হিসাবও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। এ অবস্থায় সরকারের অডিট অধিদফতর এসব অনিয়মে আপত্তি জানিয়েছে।
অধিদফতরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এর আওতাধীন ধানমন্ডি লেকের ইজারাদারের কাছ থেকে ভাড়া বা ইজারার টাকা নিয়মিতভাবে আদায় করা হয়নি। এতে সিটি করপোরেশনের এক কোটি ৮২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। এই নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে ২০১৭ সালের জুনে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই টাকা আদায় করা হয়নি। সে হিসেবে এখন এই পাওনা আরও অনেক বাড়ার কথা।
সিটি করপোরেশনের অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ৮৫ দশমিক ৬০ একর আয়তনের ধানমন্ডি লেকটি তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে মেসার্স মোনামি ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স চিলিস মোনামি জেবি ও মেসার্স ডায়নামিক ফুড কোর্ট। তবে এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেসার্স মোনামি ইন্টারন্যাশনাল ও মেসার্স চিলিস মোনামি জেবির মালিক একই ব্যক্তি। তার নাম কবির হোসেন। আর মেসার্স ডায়নামিক ফুড কোর্টের মালিক মির্জা শাহরুখ জলিল।
ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ধানমণ্ডি লেককে ৮ টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়ার মাধ্যমে পরিচালনা করা হচ্ছে। এই ৮টি সেক্টরের মধ্যে ১ নং সেক্টর মেসার্স মোনামি ইন্টারন্যাশনাল, ৩ ও ৭ নং সেক্টর মেসার্স ডায়নামিক ফুড কোর্ট ও ২,৪ এবং ৫ নং সেক্টর চিলিস মোনামি জেবি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তবে ৬ নং সেক্টরটি বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পাশে হওয়ায় নিরাপত্তাজনিত কারণে ইজারা দেওয়া থেকে বিরত রেখেছে ডিএসসিসি। আর পুরো লেক ও লেক সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তা, পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৮ নং সেক্টর তৈরি করা হয়েছে। এটিও ইজারা দেওয়া হয়নি। ২০১৬ সালে এদের ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও পুরোদমে এখনও ব্যবসা চলছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র আরও জানিয়েছে, লেকটিতে গাড়ি পার্কিং, রেস্টুরেন্ট, সিটিং প্লাজা, পাবলিক টয়লেট, স্কেটিং এরেনা, শিশু পার্কসহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। এগুলো থেকে নির্দিষ্ট হারে ভাড়া আদায় করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। আর ইজারা থেকে আদায়কৃত অর্থেই লেক রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। কিন্তু ইজারাদাররা অতিরিক্ত দোকান ও কারপার্কিং বসিয়ে পার্কের অবস্থা বেহাল করে রেখেছেন। উপরোন্তু সিটি করপোরেশনকেও নিয়মিতভাবে ভাড়া দিচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, আমরা ইজারা নবায়নের জন্য আবেদন করছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনও অনুমোদন দেয়নি। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। তবে তাদের কোনও ভাড়া বাকি নেই বলে দাবি করেন তিনি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে মেসার্স ডায়নামিক ফুড কোর্টের মালিক মির্জা শাহরুখ জলিলকে ফোন করা হলে তিনি প্রশ্ন শুনে বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে কথা বলতে পারবো না। মিটিংয়ে রয়েছি।’
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ধানমন্ডি লেক তদারকির জন্য দুটি কমিটি রয়েছে। একটি আমাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে অন্যটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে। আমাদের কমিটি ইজারা বিষয়টি রেজুলেশন করে মন্ত্রণালয়ের কমিটিতে পাঠায়। তারা সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু এখনও সেই সিদ্ধান্ত আসেনি।
ভাড়া বকেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, লেকে অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে। সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে এরই মধ্যে আমরা ১০০জনের মতো নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিয়েছি। লেকে দোকান ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত এ কারণে হয়েছে যাতে করে লেকের ভাড়া দিয়ে লেক রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়।