দুদকের সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি গৃহায়ন মন্ত্রণালয়

এফ আর টাওয়ারে আগুনবনানীর এফআর টাওয়ারে নকশাবহির্ভূত অংশ নির্মাণের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবনটির মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যে সুপারিশ করেছিল, তা বাস্তবায়ন করেনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এসব সুপারিশের মধ্যে অন্যতম হলো—নিয়ম না মেনে ভবনটির যে অংশ নির্মাণ করা হয়েছে তা ভাঙতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দুদকের প্রস্তাবিত সুপারিশগুলোর বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হলেও গৃহায়ন মন্ত্রণালয় বলছে—কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন, আর বাকিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সময়ের প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে ২৬ জন প্রাণ হারান, আহত হন ৭৩ জন। ঘটনার পর আগুনের কারণ অনুসন্ধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন মন্ত্রণালয় ও দুদক পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। সম্প্রতি এসব কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, টাওয়ারের মালিক ইঞ্জিনিয়ার এসএমএইচআই ফারুক হোসেন অবৈধভাবে ১৮ তলা নকশার ওপর ২৩ তলা ভবন নির্মাণ করেন। আর এ কাজে সহযোগিতা করেন রাজউকের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এমন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর অসৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে গত ২৮ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠায় দুদক।

পরে দুদকের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য গত ৭ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও দুদকের সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি।  

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে লেখা দুদকের চিঠিতে বলা হয়—রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় বনানীর এফআর টাওয়ার ভবনটি অনুমোদিত ১৮তলা নকশার ওপরে নিয়মবহির্ভূতভাবে ২৩ তলা পর্যন্ত নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক মনে করে, দুর্ঘটনা রোধকল্পে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে প্রচলিত ভবন নির্মাণ আইন যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে রাজউকে বিভিন্ন অধিদফতর বা সংস্থার প্রকৌশলীদের প্রেষণে নিয়োগ কমাতে হবে। এক্ষেত্রে নিজস্ব জনবল সৃষ্টি ও দক্ষতা বাড়ানোর তাগিদ দেয় দুদক।  

দুদকের সুপারিশে এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের পরিবারকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলা হয়। এছাড়া টাওয়ারটির অনুমোদনবহির্ভূত ১৯, ২০, ২১, ২২ ও ২৩ তলা সিলগালা করে তা ভেঙে ফেলার জন্যও বলে দুদক।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দুদকের এসব সুপারিশ সম্বলিত চিঠি পাওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি নীতি অধিশাখা থেকে গত ৭ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে দুদকের প্রস্তাবিত সুপারিশগুলোর বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহম্মদ শফিউল আলম জানান, দুদকের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে দুদকের পাঠানো সুপারিশ সম্বলিত চিঠির ছায়ালিপিও পাঠানো হয়েছে। এখন তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুদকের সুপারিশ সম্বলিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি আমরা পেয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা এফআর টাওয়ারের বিষয়ে অনেক সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করেছি। তবে কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ। কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরশীল।’ আর কিছু সুপারিশ আছে, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান সচিব।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ভবনের অষ্টম তলার পূর্বপাশ থেকে আগুন পরে অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ওই ভবনটি সিলগালা করে রেখেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।