পোশাক কারখানায় যৌন হয়রানি দেখছেন না রুবানা হক!

তৈরি পোশাক কারখানা২০১৯ সালের মে মাসে প্রকাশিত এক গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, দেশের তৈরি পোশাক কারখানায় ২২ দশমিক ৪ শতাংশ নারী শ্রমিক যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। কিন্তু বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক মনে করেন,এখন আর তেমন কোনও ঘটনা ঘটছে না। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিজিএমইএ-এর সদস্যভুক্ত প্রত্যেক ফ্যাক্টরিতে পাঁচ সদস্যের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন আর কোনও ফ্যাক্টরিতে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে না। এদিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন, বেশিরভাগ কারখানায় যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে কোনও কমিটি নেই। এরপরও বিজিএমইএ সভাপতি যদি বলে থাকেন কমিটি হয়েছে, তবে এমন একশ’ ফ্যাক্টরির তালিকা হাজির করতে পারেন, সেটিও আমাদের জন্য অনেক পাওয়া হবে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ২০১৯ সালের মে মাসে ঢাকার মিরপুর, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ বোস্তামী রোডে অবস্থিত ২২টি পোশাক কারখানায় এই গবেষণাটি পরিচালনা করে।

এদিকে, ২০১৮ সালে ব্লাস্ট, ব্র্যাক, ক্রিশ্চিয়ান এইড, নারীপক্ষ ও এসএনভি যৌথভাবে আরেকটি গবেষণা জরিপ চালায়। ওই জরিপের ফলাফল বলছে, ৮৩ শতাংশ নারী শ্রমিক কারখানার সুপারভাইজর ও ব্যবস্থাপকদের কাছে নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২২ শতাংশ নারী শ্রমিক জানিয়েছেন, তারা কারখানার ভেতরে অথবা বাইরে শারীরিক, মানসিক ও যৌন হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন। ৬৬ শতাংশ মনে করেন, তারা কোনও বিচার পাবেন না, তাই প্রতিকার চাইতেও যান না। ৬৮ শতাংশ জানান, তাদের কারখানায় সত্যিকারভাবে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কোনও কমিটি নেই।

কী ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয় প্রশ্নে মিরপুরের এক গার্মেন্টস কর্মী সাহারা বলেন, ‘অকথ্য ভাষার গালাগালির মধ্যেই থাকি। আর গায়ে হাত দেওয়ার কথা দুদিন পরপরই আমরা একজন আরেকজনরে বলি। কেউই বাদ নাই। নানা ইঙ্গিত করে বাজায়ে দেখার চেষ্টা করে, তাদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ আছে কিনা। সাড়া দিলে কিছু সুযোগ সুবিধাও পাওয়া যায় বলে শুনেছি।’ এখন নাকি আর যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে না, এমন প্রশ্নের জবাবে আরেক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সাভারে আমাদের এক শ্রমিক বোন গত মাসে মারাত্মক যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। আমি নিজে এখনও ফ্যাক্টরিতে কাজ করি। আমার কাছে এসব গল্প মনে হচ্ছে।’

বিজিএমইএ-তে কোনও জেন্ডার স্পেশালিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিনা প্রশ্নে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘এমন কোনও পোস্ট তাদের প্রতিষ্ঠানে নেই।’ তিনি বলেন, ‘‘যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত প্রত্যেক ফ্যাক্টরিতে পাঁচ সদস্যের ‘সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক ফ্যাক্টরিতে এই কমিটি থাকা বাধ্যতামূলক।’’ তিনি বলেন,‘এই কমিটিতে দুজন নারী সদস্য থাকবেন।’

এখন আর কোনও ফ্যাক্টরিতে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কোনও ফ্যাক্টরিতে যদি এ ধরনের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে আমি সরাসরি অ্যাকশনে যাবো। কাজেই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে—এটা শুধু শুধু বলে আমাদের ইমেজ নষ্ট করা ঠিক হবে না।’

রুবানা হকের দেওয়া এই তথ্য সঠিক নয় উল্লেখ করে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রতিনিয়ত নানা যৌন হয়রানির ঘটনার খবর আসছে। বেশিরভাগ ফ্যাক্টরিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক কোনও কমিটি নেই। যৌন হয়রানি প্রতিরোধে গঠিত কমিটি আছে— এমন একশ’ ফ্যাক্টরির তালিকাও যদি বিজিএমইএ সভাপতি দিতে পারেন, সেটিই বিশাল অর্জন হবে। তবে ১০ বছর আগের তুলনায় কিছু জায়গায় পরিস্থিতি ভালো হয়েছে এবং সেটি শ্রমিকরা নিজেরা লড়াই করে অর্জন করেছেন।’