অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার শপথ

শপথে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা

অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার শপথের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের আপাতত সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। বুয়েটে সব ধরনের সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানকে সম্মিলিতভাবে রুখে দেওয়ারও শপথ নেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে এই গণশপথ অনুষ্ঠিত হয়। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারসহ ১০ দফা দাবিতে গত ৭ অক্টোবর থেকে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।

শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয় বুধবার দুপুর সোয়া একটায়। শপথগ্রহণ পরিচালনা করেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাফিয়া রিজওয়ানা। শপথে বলা হয়, ‘আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আজ এই মুহূর্ত থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার কল্যাণ ও নিরাপত্তার নিমিত্তে আমার ওপর অর্পিত ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক, নৈতিক ও মানবিক সব প্রকার দায়িত্ব সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবো। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় আমার জ্ঞাতসারে হওয়া প্রত্যেক অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমি সর্বদা সোচ্চার থাকবো। আমি আরও  প্রতিজ্ঞা করছি যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব প্রকার সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানকে আমরা সম্মিলিতভাবে রুখে দেবো। নৈতিকতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সব ধরনের বৈষম্যমূলক অপসংস্কৃতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার আমরা সমূলে উৎপাটিত করবো। এই আঙিনায় আর যেন কোনও নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে না যায়। আর কোনও নিরপরাধ শিক্ষার্থী যেন অত্যাচারের শিকার না হয়। তা আমরা সবাই মিলে নিশ্চিত করবো।’

গণশপথে অংশ নেন বুয়েটের উপাচার্যঅনুষ্ঠানে শপথগ্রহণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পরিচালক মিজানুর রহমান, হলের প্রভোস্ট এবং শিক্ষার্থীরা। বুকে হাত রেখে দাঁড়িয়ে সবাই শপথ নেন।

এর আগে শুরুতে আবরারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। উপাচার্য শপথ অনুষ্ঠানে আসেন দুপুর একটা ১১ মিনিটে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক একেএম মাসুদ, ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পরিচালক মিজানুর রহমান, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন হলের প্রভোস্টরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

তবে সবাই শপথগ্রহণ করলেও শিক্ষকদের শপথ না নিতে বলেন শিক্ষার্থীরা। শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছেন যারা, তারা শপথ নেন। 

শপথগ্রহণ শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সায়েম বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাতে চাই বুয়েট প্রশাসনকে। আমাদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের দিকে যাওয়ার জন্য। আজকে শপথের মাধ্যমে মাঠের আন্দোলন শেষ হলেও ১০ দফা দাবির বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ চলবে।’

শপথ অনুষ্ঠানের আগে প্রথমে আবরারের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শপথগ্রহণ শুরু হয়।

শপথ অনুষ্ঠান শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, চার্জশিট হওয়ার পর অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত কোনও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না তারা। এ বিষয়ে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সময় নষ্ট না করার আহ্বান জানান। 

গণশপথে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা

প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর রাত তিনটার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পর দিন চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন আবরারের বাবা। এ মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ আসামিসহ এ পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম